ISRO: বছর শেষে ইসরোর আরও এক সাফল্যের অধ্যায়, প্রতিবেশি দেশের স্যাটেলাইটের সফল যাত্রা
বছরের শেষান্তে সকলকে চমকে দিয়ে সাফল্যের এক নয়া অধ্যায়ের সূচনা করলো ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (Indian Space Research Organisation) বা ইসরো (ISRO)। গত ২৬ নভেম্বর মহাকাশ সংস্থাটি EOS-06 নামক আর্থ অবজ়ার্ভেশন স্যাটেলাইট এবং আটটি ন্যানো স্যাটেলাইট লঞ্চ করেছে। এদিন সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে PSLV-C54 -এর মাধ্যমে স্যাটেলাইটগুলিকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই আটটি ন্যানো স্যাটেলাইটের মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়া-ভুটান স্যাটেলাইট আইএনএস-২বি (INS-2B), বেঙ্গালুরু ভিত্তিক স্টার্টআপ পিক্সেল ইন্ডিয়া (Pixxel India) কর্তৃক বিকশিত আনন্দ (Anand), ধ্রুব স্পেস (Dhruva Space)-এর দুটি থাইবোল্ট (Thybolt) এবং স্পেসফ্লাইট ইউএসএ (Spaceflight USA) সংস্থার বানানো চারটি অ্যাস্ট্রোকাস্ট (Astrocast)। সবমিলিয়ে, এই উৎক্ষেপণের হাত ধরে ISRO যে এক নয়া গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করলো, সেকথা বলাই বাহুল্য।
এই প্রথম ভারত এবং ভুটান হাতে হাত মিলিয়ে সফল মহাকাশ মিশন সুসম্পন্ন করলো
উল্লেখ্য যে, গত শনিবারের এই মহাযজ্ঞের প্রথম লঞ্চপ্যাড ছিল সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার। এদিন প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী দীর্ঘ মিশনে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থাটি স্যাটেলাইটগুলিকে একাধিক কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করেছে। সোজা কথায় বললে, রকেট থেকে স্যাটেলাইটগুলি বিচ্ছিন্ন হতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে, এবং তারপরে তারা নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রতিস্থাপিত হয়। উপগ্রহগুলি যাতে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়, তার জন্য সেগুলিকে আলাদা আলাদা সময়ে ইনজেক্ট করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই প্রথম ভুটানের উপগ্রহ মহাকাশে পৌঁছে দিল ভারত। এর সুবাদে দুই দেশের পারস্পরিক যৌথতায় মহাকাশচর্চার ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা হল, যার জেরে মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন নজির গড়লো ইসরো।
ভারত শত্রুতা নয়, বন্ধুত্বের তত্ত্বেই বিশ্বাসী
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, দুই দেশের বিজ্ঞানীরাই এই প্রোজেক্টটির জন্য যৌথভাবে কাজ করেছেন। গত শনিবার মহাকাশচর্চার এই নতুন যুগের সূচনার চাক্ষুষ সাক্ষী থাকতে ভুটানের তরফে উপস্থিত ছিলেন সেদেশের তথ্য ও জনসংযোগ মন্ত্রী কার্মা ডনেন ওয়াংডি (Karma Donnen Wangdi)। এছাড়া, সমস্ত প্রজেক্টটি যথাযথভাবে সুসম্পন্ন করার জন্য এবং এভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পাশাপাশি এদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদী তার এক টুইটে ইসরোকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি একথাও বলেছেন যে, বর্তমান সময়ে সুষ্ঠু বৈদেশিক সম্পর্কই হল সুস্থভাবে বেঁচে থাকার মূল চাবিকাঠি। তাই ভারত শত্রুতা নয়, বন্ধুত্বের তত্ত্বেই বিশ্বাসী - যা ইসরোর সাম্প্রতিক এই প্রোজেক্টের মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হল।
প্রোজেক্ট সফলভাবে সুসম্পন্ন হওয়ায় যারপরনাই আনন্দিত ISRO-র চেয়ারম্যান
উল্লেখ্য যে, শনিবার বিকেলে অন্যান্য আটটি ন্যানো স্যাটেলাইট ছাড়াও PSLV-C54 রকেটটি শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারের প্রথম লঞ্চ প্যাড থেকে উৎক্ষেপণের প্রায় ১৭ মিনিট পরে ১,১১৭ কেজি ওজনের আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইটটিকে (EOS-06) ৭৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সূর্যের সিঙ্ক্রোনাস পোলার অরবিটে (sun synchronous polar orbit বা SSPO) স্থাপন করে। এই বিশেষ স্যাটেলাইটটি ওশানস্যাট-৩ (Oceansat-3) নামেও পরিচিত। বলে রাখি, EOS-06 হল ওশানস্যাট সিরিজের একটি তৃতীয় প্রজন্মের উপগ্রহ, যেটিকে ওশ্যানস্যাট-২ -এর তুলনায় আরও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এই মিশনকে সফলভাবে সুসম্পন্ন করতে পেরে যারপরনাই আনন্দিত ISRO-র চেয়ারম্যান এস সোমনাথ (S Somanath)। সেইসাথে ভবিষ্যতে যে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি আরও একাধিক উল্লেখযোগ্য নজির গড়তে সক্ষম হবে, সে বিষয়েও চরম আশাবাদী তিনি।