জৈব বর্জ্য থেকে গাড়ির দূষণমুক্ত জ্বালানি তৈরির নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন ভারতীয় গবেষকরা
পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেট্রল ও ডিজেলের দাম। তবে তার থেকেও বেশি চিন্তার কারণ হলো, জীবাশ্ম জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে লাফিয়ে বাড়ছে উষ্ণায়নের মাত্রা। কালো ধোঁয়া বের করে গাড়ি চলাচল করায় দিন দিন পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে। তাই বায়ো ফুয়েল, গ্রিন হাইড্রোজেনের মতো দূষণহীন জ্বালানি ব্যবহার করে যানবাহন চলছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলিতে। কিন্তু ভবিষ্যতের স্বচ্ছ জ্বালানি হিসাবে দাবি করা সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের পদ্ধতি যথেষ্ট ব্যয়বহুল।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc) এর একদল গবেষক এক নতুন ধরনের প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন, যা দিয়ে বায়োমাস বা জৈব বর্জ্য থেকে হাইড্রোজেন প্রস্তুত করা সম্ভব। দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন IISc-এর অন্তর্গত সেন্টার ফর সাসটেনেবল টেকনোলজিস-এর অধ্যাপক এস দাসপ্পা। তিনি বলেন, "সমগ্র ভারতে প্রায় ৫০ লক্ষ টন হাইড্রোজেন বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু এর বেশিরভাগটাই স্টিম মিথেন রিফর্মিং রুট নামক পদ্ধতিতে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকেই উৎপাদিত। এবার আমরা সম্পূর্ণ অচিরাচরিত শক্তির উৎস, জৈব বর্জ্য থেকে গ্রিন হাইড্রোজেন তৈরি করার উপায় পেয়ে গিয়েছি।"
এই পদ্ধতিটি দুটি ধাপে বিভক্ত - প্রথমে নোবেল বিক্রিয়ক হিসাবে অক্সিজেন ও স্টিম ব্যবহার করে জৈব বর্জ্যগুলিকে হাইড্রোজেন সমৃদ্ধ ফুয়েল গ্যাসের মিশ্রণ 'সিনগ্যাস' এ পরিণত করা হবে। এরপর সিনগ্যাস থেকে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি কম প্রেসার যুক্ত গ্যাস প্রস্তুতকারী মেশিন কাজে লাগিয়ে বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন তৈরি করা হবে।
IISc ব্যাঙ্গালোর এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, "এই পদ্ধতিটি গ্রীন হাইড্রোজেন তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর প্রক্রিয়া। এর সাহায্যে ১ কেজি জৈব বর্জ্য থেকে ১০০ গ্রাম হাইড্রোজেন তৈরি করা সম্ভব। কারণ এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত বাষ্পের মধ্যেও হাইড্রোজেন বর্তমান থাকে, যা সমসত্ব ও অসমসত্ব বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে"। সবুজ হাইড্রোজেন তৈরি করার এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি পরিবেশবান্ধব বলেও তারা দাবি করেন।
উল্লেখ্য, ইলেকট্রোলিসিস পদ্ধতিতে সৌর বা বায়ু বিদ্যুৎ থেকে তৈরি গ্রিন হাইড্রোজেনও দিশা দেখাচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই ধরনের বিকল্প শক্তি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার ঘোষণা করেছেন দেশের বড় শিল্পপতিরা। আবার খালের জল থেকে গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ি। এমনকি নিজেও পরীক্ষামূলক ভাবে হাইড্রোজেন জ্বালানি নির্ভর বৈদ্যুতিক গাড়ি Toyota Mirai ব্যবহার করছেন তিনি।