স্কুলের গন্ডি না পেরোতেই আমেরিকায় ৩৩ লাখ টাকা বেতনের চাকরি ভারতীয় কিশোরের, কিন্তু হাতছাড়া হল পরে

Avatar

Published on:

নাগপুর অধিবাসী বেদান্ত দেওকাতে নামের এক কিশোরের সাফল্যের কাহিনী রীতিমতো ভাইরাল নেট-দুনিয়ায়। একটি আমেরিকা ভিত্তিক অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ফার্ম আয়োজিত ‘ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিযোগিতার বিজয়ী হয়ে বার্ষিক ৩৩ লক্ষ টাকার স্যালারি প্যাকেজ সহ ‘ড্রিম জব’ পান এই বালক। তবে সবথেকে অবাক করা ব্যাপার হল, মাত্র ২ দিনের মধ্যে ২,০০০ -টিরও বেশি লাইন কোড লিখে ১,০০০ জনকে ছাপিয়ে সেরা কোডার হয়েও, বেদান্তের বয়স মাত্র ১৫ বছর জানতে পেরে ফার্মটি তৎক্ষণাৎ তাদের এই লোভনীয় চাকরির অফারটি প্রত্যাহার করে নেয়।

নাগপুর-বাসী কিশোর কোডারের প্রতিভায় মুগ্ধ মার্কিন ফার্ম, পড়াশোনা শেষে চাকরিতে নিয়োগের আস্থা

এই বিষয়ে বেদান্ত জানিয়েছে যে, তার মায়ের পুরানো ল্যাপটপে ইনস্টাগ্রাম ব্রাউজ করা কালীন একটি ‘ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিযোগিতার লিঙ্ক পেয়েছিলেন। কৌতুক ও আগ্রহের বশে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তারপর যেমন ভাবা তেমন কাজ। মাত্র ২ দিনের মধ্যে ২,০৬৬ লাইন কোড লিখে প্রদত্ত লিঙ্কে কাজ পাঠিয়ে দেন বেদান্ত। পরবর্তীতে, নিউ জার্সি ভিত্তিক অ্যাডভার্টাইজমেন্ট সংস্থাটি কন্টেস্টের বিজয়ী প্রার্থী হিসাবে বেদান্তকে “কাজ বরাদ্দ এবং অন্যান্য কোডারদের পরিচালনা” করার জন্য তাদের ‘হিউম্যান রিসোর্স ডেভলপমেন্ট’ বা HRD টিমে যোগদান করার একটি অফার লেটার পাঠায়। কিন্তু, আবেদনকারী মাত্র ১৫ বছর বয়সী কিশোর জানতে পেরে সংস্থাটি তাদের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। জানিয়ে রাখি, সারা বিশ্ব থেকে আসা প্রায় ১,০০০টি এন্ট্রির মধ্যে থেকে বেদান্তকে বেছে নেওয়া হয়েছিল।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, মার্কিন অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এজেন্সিটি বেদান্তকে হতাশ হতে বারণ করেছে এবং তাকে পড়াশুনা শেষ করার পর সংস্থার সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি বেদান্তের উদ্দ্যেশ্যে তারা লিখেছে, “আমরা আপনার অভিজ্ঞতা, পেশাদারিত্ব এবং কাজের পন্থা দেখে মুগ্ধ। আমাদের টিম আপনার উপস্থাপনা উপভোগ করেছে এবং আমাদের স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে আপনার মতামতকে যথেষ্ট সমাদর করেছে।”

নাগপুরে-বাসী এই কিশোর পূর্বেও animeeditor.com ডোমেন নামের সাথে একটি ওয়েবসাইট ডেভলপ করছিল বলে আমরা জানতে পারি। এই ওয়েবসাইটটি ইউজারদের ইউটিউবের ন্যায় ভিডিও আপলোড করার বিকল্প অফার করে। একই সাথে – ব্লগ, ভ্লগ, চ্যাটবোট, এমনকি ভিডিও ওয়াচিং প্ল্যাটফর্মও যুক্ত আছে এই সাইটে। উপরন্তু, এই পোর্টালে ” একজন তার প্রোফাইল সম্পাদনা করতে পারবে। আর লাইভ ফলোয়ার এবং লাইক পেতে পারে” বলেও জানিয়েছে বেদান্ত। এই ওয়েবসাইট বিকাশে সে HTML, জাভাস্ক্রিপ্ট ল্যাঙ্গুয়েজ এবং ভার্চুয়াল স্টুডিও কোড (২০২২) ব্যবহার করেছে।

প্রসঙ্গত, বেদান্ত দেওকাতে একটি রাডার সিস্টেম মডেল ডিজাইন করার মাধ্যমে ওয়াথোদা ভিত্তিক তার স্কুল নারায়ণ ই-টেকনো -তে আয়োজিত একটি বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন।

বেদান্তের বাবা রাজেশ এবং মা অশ্বিনী দেওকাতে পেশায় নাগপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সহকারী অধ্যাপক তথা অধ্যাপিকা। ছেলে যাতে পড়াশোনায় কোনো প্রকার অবহেলা করতে না পারে, তার জন্য তারা বেশিরভাগ সময়ই ল্যাপটপ এবং মোবাইল বেদান্তের থেকে দূরেই রাখতেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও, লকডাউনের সময় সফ্টওয়্যার ডেভলপ, কোডিং এবং এবং পাইথনের মতো কোডিং টেকনিক অনলাইনে শেখার জন্য তার মায়ের ল্যাপটপ ব্যবহার করে নেট অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রায় দুই ডজন টিউটোরিয়াল সেশনে অংশ নিয়েছিলেন, বলে জানিয়েছেন এই কিশোর। এমনকি জানা গেছে, animeeditor.com ওয়েবসাইটটি তিনি তার মায়ের পুরানো এবং ধীরগতির ল্যাপটপেই ডেভেলপ করেছিলেন, যা যথেষ্টই অবাক করেছে আমাদের।

তবে ছেলের বিদেশী সংস্থায় লক্ষাধিক টাকার চাকরি প্রাপ্তি হওয়ার ঘটনার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ, বেদান্তের বাবা রাজেশ দেওকাতে এখন তাকে একটি নতুন ল্যাপটপ কিনে দেওয়ার কথা ভাবছেন। এই বিষয়ে রাজেশের মন্তব্য, “সম্পূর্ণ ঘটনাটি আমাদের অজানা ছিল। আমার ছেলের স্কুল থেকে একটি কল আসে, যেখানে আমাদের এই চাকরির অফার সম্পর্কে বলা হয়।” তিনি আরো যোগ করেন যে “বেদান্ত মার্কিন সংস্থার কাছ থেকে একটি ই-মেল পেয়েছিল এবং বিভ্রান্ত হয়ে সে তার শিক্ষকদের ব্যাপারটি জানিয়েছিল। চাকরির অফার সত্য প্রমাণিত হলে বেদান্তের শিক্ষকরাও হতবাক হয়ে যায়। তারা আমার ছেলেকে ই-মেলের রিপ্লাই লিখতে সাহায্য করে এবং সংস্থাটিকে জানায় যে বেদান্ত মাত্র ১৫ বছর বয়সী দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এক ছাত্র।”

কিশোরের মা তথা কম্পিউটার সাইন্স এবং ইলেকট্রনিক্সের অধ্যাপিকা অশ্বিনীর বিবৃতিতে, “বেদান্ত সারাক্ষন ল্যাপটপ নিয়ে পরে থাকতো” যা তাকে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। কিন্তু, ছেলে যে পড়াশোনায় ফাঁকি না দিয়ে বরং উৎপাদনশীল কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেছে সেই সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না অশ্বিনীর। “আমরা সবসময় বেদান্তকে কঠোর অনুশাসনে রেখেছিলাম এবং অধ্যয়ন করার প্রতি অধিক জোর দিয়েছি,” তবে এখন ছেলের মেধার প্রমান হাতেনাতে পেয়ে যথেষ্ট গর্বিত বেদান্তের বাবা-মা।

সঙ্গে থাকুন ➥