Thunderbird মডেল ফিরিয়ে আনতে পারে Royal Enfield, এবার 650cc বাহুবলী অবতারে
ঐতিহ্য ও পরম্পরাকে নিয়ে গর্ব করে এগিয়ে যেতেই ভালবাসি আমরা ভারতীয়রা। প্রায়ই ভাবি, কী সুন্দরই না হত, যদি ফেলে আসা দিনগুলির অনুভূতিকে যদি নতুন করে ফিরে পাওয়া যেত। তাহলে তো টাইম মেশিনের দরকার! অবশ্য কল্পবিজ্ঞানে বর্ণিত এই যন্ত্র ছাড়াই পুরনো দিনের অনুভূতি উপভোগ করছেন রয়্যাল এনফিল্ড (Royal Enfield)-এর মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা। সংস্থার নামে যেমন রাজকীয়তা, বাইকের নকশা তেমনই সাবেকিয়ানায় মোড়া।
তবে ইদানিং নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে প্রযুক্তির দিক থেকে পরিবর্তন করেছে জন্মসূত্রে ব্রিটিশ কিন্তু পরবর্তীতে আদ্যপান্ত ভারতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া রয়্যাল এনফিল্ড। প্রযুক্তির নিরিখে পিছিয়ে থাকার দুর্নাম ঘুচিয়ে তারা বিগত দু'বছর ধরে একে একে বাজারে নিয়ে এসেছে মিটিওর ৩৫০ (Meteor 350) ক্রুজার, নতুন প্রজন্মের ক্লাসিক ৩৫০ (Classic 350), এবং পাহাড় থেকে জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়ানোর পাশাপাশি সমতলে চালানোর জন্য উপযোগী স্ক্র্যাম ৪১১ (Scram 411)।
এবার রয়্যাল এনফিল্ড-এর লক্ষ্য ৬৫০ সিসি মোটরসাইকেলের বাজারে নতুন বেঞ্চমার্ক তৈরি। যদিও এখানে তাদেরকে টেক্কা দেওয়ার সাহস কারোর নেই। এই বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বীদের নাস্তানাবুদ করে ক্রমশ বিক্রি বাড়িয়ে চলেছে তারা। ভিনটেজ আকর্ষণ এবং সাবেকি সাজের দুই নতুন ৬৫০ সিসি মোটরসাইকেলের উপর কাজ করছে রয়্যাল। দেশ-বিদেশে রাস্তায় ট্রায়াল চলার সময় যাদের ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসের মতো।
লঞ্চের আগেই তাদের মধ্যে একটি সুপার মিটিওর ৬৫০ (Super Meteor 650) নামে পরিচিতি পেয়েছে এবং অপর মডেলটি গত বছরের মিলানে প্রদর্শিত এসজি ৬৫০ (SG 650) কনসেপ্ট মডেলের চূড়ান্ত রূপ শটগান ৬৫০ (Shotgun) হিসাবে অনুমান করা হচ্ছে। যার সৌন্দর্য বাইকপ্রেমীদের মনে ঝড় তুলে দিয়েছিল তখন। এখন অবশ্য খবরের শিরোনামে সুপার মিটিওর। ক'দিন আগে দেখা গিয়েছে ভারতের রাস্তায়। সেটা নিয়ে আলোচনা চলার পাশাপাশি এবার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল মোটরসাইকেলটির অফিশিয়াল নামকরণ নিয়ে।
দাবি করা হয়েছে, সেটি থান্ডারবার্ড ৬৫০ (Thunderbird 650) নামে বাজারজাত করার সম্ভাবনা প্রবল। জনপ্রিয় ইউটিউবার বুলেট গুরু তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিয়ো আপলোড করেছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রয়্যাল এনফিল্ড-এর ওয়েবসাইটে সার্ভিস বুকিংয়ের পেজে সবার শেষে এক নতুন মোটরসাইকেলের নাম - থান্ডারবার্ড এক্স ৬৫০ (Thunderbird X 650)। যা সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের আর কোথাও উল্লেখ নেই। অনুমান, এটাই সংস্থার আসন্ন ৬৫০ সিসি ইঞ্জিনযুক্ত দু'চাকা গাড়ির নাম। এবং অজ্ঞাত কোনও কারণবশত সেটি ফাঁস হয়েছে।
এই নিয়ে খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হতেই নামটি অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে মুছে দেওয়া হয়। যদিও তার আগেই স্ক্রিন রেকর্ডিংয়ের ভিডিয়ো ঝড়ের গতিতে শেয়ার হয়ে গিয়েছে। ধারণা, থান্ডারবার্ড ৬৫০-এর স্পোর্টি ও আধুনিক ভ্যারিয়েন্ট রূপে আসবে রয়্যাল এনফিল্ড থান্ডারবার্ড এক্স ৬৫০। অতীতে যেমন ভাবে থান্ডারবার্ড ৩৫০/৫০০ এবং থান্ডারবার্ড ৩৫০ এক্স/৫০০ এক্স মডেলকে পৃথক করা হয়েছিল।
এদিকে, বিভিন্ন ছবিতে বাইকটিকে পুরনো দিনের মতো স্পোকযুক্ত চাকা এবং মডার্ন অ্যালয় হুইল, দু'ভাবেই দেখা গিয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের ধারণা, স্পোক ও অ্যালয় অপশন যথাক্রমে থান্ডারবার্ড ৬৫০ এবং থান্ডারবার্ড ৬৫০ এক্স/থান্ডারবার্ড এক্স৬৫০ নামে আত্মপ্রকাশ করবে। প্রসঙ্গত, থান্ডারবার্ড রেঞ্জের মোটরসাইকেল বহু বছর ধরে বিক্রি হয়েছে। তবে ২০২০ সালে তাদের বিক্রি বন্ধ করে বদলি হিসাবে মিটিওর বাইক আসে। ভাল পারফরম্যান্স ও আরামপ্রদ রাইডের গুণে ক্রেতাদের খুশি করতে পেরেছে এটি। তবে থান্ডারবার্ড-এর সুন্দর নামকে কেন বাদ দেওয়া হল, তা বেশ ভাবিয়েছিল রয়্যাল এনফিল্ডপ্রেমীদের। এই নামের কপিরাইট নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল বলে শোনা যায়।
বলা হয়, লক্ষ্য বড় হলে কিছু সিদ্ধান্ত অপ্রীতিকর বলে মনে হতে পারে। কারণ থান্ডারবার্ড নিয়ে বড় অঙ্ক কষছিল রয়্যাল এনফিল্ড। সত্যিই খুব বড় পরিকল্পনা। যার আঁচ আগে পাওয়া যায়নি। অতীতে এই রেঞ্জে ৩৫০ সিসি থেকে ৫০০ সিসি আয়তনের ইঞ্জিন-সহ বাইক এসেছে। আর খবর সত্যি হলে, ৬৫০ সিসি ইঞ্জিন দিয়ে নতুন অবতারে ফিরবে রয়্যাল এনফিল্ড থান্ডারবার্ড।
নিজেদের ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রয়্যাল তাদের অন্যান্য মোটরসাইকেলের ধাঁচেই থান্ডারবার্ড -এর নতুন অবতার বা সুপার মিটিওর-কে বাজারে আনবে। নজর কাড়বে ক্রোম বেজেল-সহ গোল হেডল্যাম্প, আকারে বড় জ্বালানি ট্যাঙ্ক, লং রাইডের জন্য সর্বোচ্চ আরামের জোগান দিতে বিভক্ত আসন (স্প্লিট সিট), সামনে প্রসারিত ফুটরেস্ট, দু'পাশে এগজস্ট পাইপ, কাঁদা, বালি, পাথর যাতে ছিটকে না আসে সে জন্য চওড়া ফেন্ডার। এক কথায়, এক প্রকৃত প্রিমিয়াম মিডলওয়েট ক্রুজার বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম এটি।
ফিচারের প্রসঙ্গে আসলে, প্রথমেই নেভিগেশন সিস্টেমের কথা বলতে হয়। এতে টুইন পড ইনস্ট্রুমেন্ট ক্লাস্টার থাকবে৷ যার মধ্যে বেসিক তথ্যের জন্য একটি বড় অ্যানালগ-ডিজিটাল কনসোল এবং অপরটি সংস্থার নিজস্ব ট্রিপ্পার (Tripper) নেভিগেশনের জন্য একটি ছোট গোল ডিসপ্লে। এতে সময় ফুটে উঠবে। আবার ব্লুটুথ প্রযুক্তিতে স্মার্টফোনের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে অ্যাপে গন্তব্যস্থল চয়ন করলে সরাসরি বাইকের ছোট ডিসপ্লেতে সেখানে যাওয়ার পথনির্দেশ পাওয়া যাবে। একটি অ্যারো বা তীর চিহ্নের মাধ্যমে সেটি গাইডের কাজ করবে। কত কিলোমিটার কাছে বা দূরে সেটিও জানা যাবে। বারবার স্মার্টফোন খুলে দেখার প্রয়োজন হবে না।
পারফরম্যান্সের নিরিখে এর থেকে নতুন কিছু আশা না করাই শ্রেয়৷ কারণ কন্টিনেন্টাল জিটি ৬৫০ এবং ইন্টারসেপ্টর ৬৫০-এর মতো চালিকা শক্তি যোগাতে সুপার মিটিওর ৬৫০ বা থান্ডারবার্ড ৬৫০ মডেলে অয়েল কুল্ড প্যারালাল টুইন ৬৫০ সিসি ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে। যার ক্ষমতা ৪৭ বিএইচপি এবং টর্কের পরিমাণ ৫২ এনএম৷ ৬ স্পিড ট্রান্সমিশনের সঙ্গে স্লিপার ক্লাচ দেবে প্রাপ্তির প্রশান্তি। পর্যালোচকদের মতে, এটাই রয়াল এনফিল্ড-এর সবচেয়ে মসৃণতম এবং ঝাঁকুনি মুক্ত ইঞ্জিন।
শক্তি বেশি হলে প্রয়োজন প্রচন্ড উন্নত ব্রেক এবং সাসপেনশন সিস্টেমের। দুই চাকায় ডিস্ক ব্রেক, সঙ্গে ডুয়াল চ্যানেল এবিএস৷ বাইকের সামনে আপসাইড ডাউন ফর্কের উপস্থিতির কারণে উচ্চগতিতে আরও ভাল হ্যান্ডলিং পাওয়া যাবে। আবার সামনের চাকাকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত বানাবে।
প্রতি বছর অন্তত তিন-চারটি মোটরসাইকেল লঞ্চের পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। গত মার্চে স্ক্র্যাম-এর পর জুলাই অথবা অগাস্টে লঞ্চ হবে হান্টার৷ যা এখনও পর্যন্ত রয়্যাল এনফিল্ড-এর সবচেয়ে সস্তা মডেল হবে বলে জল্পনা শোনা যাচ্ছে। তারপরেই পালা আসতে পারে ওই ৬৫০ সিসি ক্রুজারের। উৎসবের মরসুম বা একেবারে বছরের অন্তিম সময়ে ঘটতে পারে আত্মপ্রকাশ। আগেই বলে রাখি, এটি এ যাবৎকালের সর্বাপেক্ষা দামী রয়্যাল এনফিল্ড হবে। কিনতে সাড়ে তিন লাখের কাছাকাছি খরচ হতে পারে।