এবার স্মার্টফোন দিয়েই মাপা যাবে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল, এল CarePlix Vital‌ অ্যাপ

সাম্প্রতিককালে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণের ভয়াবহ দাবদাহের কারণে প্রতিটি ঘরে ঘরে অক্সিমিটার (oximeter) এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা গ্যাজেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর আবির্ভাবের পর থেকে অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল এবং রেসপিরেশন রেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। এটি অক্সিমিটারের মতো ডিভাইসগুলির চাহিদাকে আরও আকাশচুম্বী করেছে। ফলে গত এক বছরে এবং বিশেষত ইদানিংকালে অক্সিমিটারকে ঘিরে চরম কালোবাজারি শুরু হয়েছে। হাজার টাকার মধ্যেও যেটিকে পাওয়া যেত, এখন সেটি কিনতে গেলে সাধারণ মানুষকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা খসাতে হচ্ছে। ফলে অনেকের পক্ষেই এটা কেনা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। এমত পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে এসে গেল এক অত্যাধুনিক অথচ সহজ প্রযুক্তি।

কলকাতার আশেপাশে অবস্থিত একটি হেলথ-টেক স্টার্টআপ সংস্থা CareNow Healthcare একটি নতুন অ্যাপ তৈরি করেছে, যার নাম CarePlix Vital। এই অ্যাপটি চালানোর জন্য একটি স্মার্টফোন এবং একটি ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়া আর অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। এই অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই স্মার্টফোন থেকে প্রায় ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে অক্সিজেন স্যাচুরেশন (SpO2), পালস এবং রেসপিরেশন রেট মাপা যাবে। এর জন্য স্মার্টফোনের রিয়ার ক্যামেরা এবং ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করতে হবে। এই রিডিংগুলি রেকর্ড-কিপিংয়ের জন্য cloud-এ সেভও করা যেতে পারে। বর্তমানে এটি Apple App Store-এ উপলব্ধ একটি রেজিস্ট্রেশন বেসড অ্যাপ্লিকেশন। আশা করা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরাও এই অ্যাপ ব্যবহারের সুবিধা পাবেন।

খুব সহজ ভাষায় বললে, এই অ্যাপ্লিকেশনটি একটি অক্সিমিটার বা স্মার্টওয়াচের অনুরূপ কাজ করে এবং একই অন্তর্নিহিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে – ফোটোপ্লেথিজমোগ্রাফি বা PPG। তবে পার্থক্যটি হল, ওয়্যারেবল ডিভাইস এবং অক্সিমিটারের ক্ষেত্রে ইনফ্রারেড লাইট সেন্সরের কাজটি এই অ্যাপে ফ্ল্যাশলাইট করে থাকে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে স্ক্যান করার জন্য ইউজারদের তাদের আঙ্গুল দিয়ে পিছনের ক্যামেরা এবং ফ্ল্যাশলাইটটিকে কভার করতে হবে। এর পরবর্তী ৪০ সেকেন্ডে, অ্যাপ্লিকেশনটি আঙুলের মধ্য দিয়ে যাওয়া আলোর তীব্রতার পার্থক্য গণনা করে এবং এই পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে একটি PPG গ্রাফ প্লট করে। এই গ্রাফ থেকে SpO2 এবং পালস রেট নির্ধারণ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, ক্যামেরার ওপর যত নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট নিয়মমতো আঙ্গুলের ব্যবহার করা হবে, তত নিখুঁত রিডিং পাওয়া যাবে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, দীর্ঘদিন থেকেই তারা অক্সিমিটারের বিকল্প প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। ২০২০ সালে করোনা অতিমারি পরিস্থিতি তাদের এই গবেষণামূলক কাজকে আরও ত্বরান্বিত করে, এবং ২০২০-এর ডিসেম্বরের মধ্যে এই অ্যাপটি তৈরির প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়। এই অ্যাপটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য ইতিমধ্যেই সংস্থাটি ২০২১ সালের শুরুতে কলকাতার শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল হাসপাতালে ১২০০ জনের ওপর একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও করেছে। এই পরীক্ষাগুলি মূলত OPD-তে ( আউটপেশেন্ট ডিপার্টমেন্ট) করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, CarePlix Vital ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে হার্টবিট ও ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন