চাঁদের দখল নিচ্ছে ভারত, আগামী জুনেই চন্দ্রযান-৩ লঞ্চ করছে ইসরো
ভারতের 'মুন ওয়াক' ইতিহাসকে আরও সুসমৃদ্ধ করতে অবশেষে এবার মাঠে নামছে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল যে, ২০২১ সালেই চাঁদের উদ্দেশ্যে উড়ে যাবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (Indian Space Research Organisation) বা ইসরো (ISRO)-র মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩। কিন্তু করোনা অতিমারীর আবহে সেই অভিযান বাস্তবায়িত করা সম্ভবপর হয়নি। তবে তাই বলে বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যে কিন্তু কোনো বিচ্যুতি ঘটেনি, উক্ত মহাকাশযানটি লঞ্চের প্রস্তুতিপর্ব এখনও জারি রয়েছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, আগামী বছরের জুনে চাঁদের উদ্দেশ্যে উড়ে যাবে চন্দ্রযান-৩। তবে এর কোনো সুনিশ্চিত দিনক্ষণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
আগামী জুনে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে Chandrayaan-3
ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ (S Somanath) সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন যে, চন্দ্রযান-৩ (সি-৩) আগামী বছরের জুন মাসে লঞ্চ ভেহিকেল মার্ক-৩ (এলভিএম৩)-এর মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হবে। তিনি আরও বলেছেন যে, বর্তমানে চন্দ্রযান-৩ -এর সাবসিস্টেম রিয়েলাইজেশন এবং কনফিগারেশন চূড়ান্ত করার জন্য জোরকদমে কাজ করছে ইসরো। দীর্ঘদিন ধরেই এই মহাকাশযান উৎক্ষেপণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরা। তাই কোভিড-১৯ -এর দরুন লকডাউন চলাকালীন সময়ও ওয়ার্ক ফ্রম হোমে থেকেই চন্দ্রযান-৩ সংক্রান্ত যেসব কাজ করা সম্ভব, সেই সবকিছুই করেছেন ইসরোর সকল কর্মী। সেক্ষেত্রে এবার অবশেষে করোনা মহামারী সহ যাবতীয় বাধাবিপত্তি কাটিয়ে চন্দ্রযান-৩ -এর উৎক্ষেপণের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা যাবে বলেই আশাবাদী সোমনাথ।
Chandrayaan-2 -এর ক্ষত দূর করতে Chandrayaan-3 -কে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছে ভারত
উল্লেখ্য যে, সর্বপ্রথম ২০০৮ সালে লঞ্চ করা হয়েছিল প্রথম চন্দ্রযান। ইসরো কর্তৃক প্রেরিত এই মহাকাশযানটি সেবছর চাঁদের বুকে জলের অস্তিত্ব সহ আরও অনেক চাঞ্চল্যকর জিনিস খুঁজে পেয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে চাঁদের যে অংশ অন্ধকার, সেই দক্ষিণ মেরুকে কেন্দ্র করে বিস্তর গবেষণার জন্য এক জটিল মিশনে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় চন্দ্রযান-২ (সি-২)। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের সময় ল্যান্ডার 'বিক্রম' ভেঙে পড়ে চাঁদের মাটিতে। তবে অরবিটার কিন্তু এখনও সচল রয়েছে, এবং সেটি বর্তমানে চন্দ্রপৃষ্ঠের পাশাপাশি সৌরজগতের উপরেও নজরদারি চালাচ্ছে। সেক্ষেত্রে চন্দ্রযান-২ -এর এই ব্যর্থতাকে মুছে দিতেই সি-৩ -কে হাতিয়ার করে নতুন করে আশায় বুক বেঁধে চন্দ্রজয়ের স্বপ্ন দেখছে ভারত।
আসন্ন চন্দ্রাভিযানকে সফল করতে সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ISRO
চন্দ্রযান-৩ সম্পর্কে এস সোমনাথ জানিয়েছেন যে, সি-৩ -কে একদম পাকাপোক্ত তথা মজবুতভাবে গড়ে তোলার জন্য চলতি সময়ে সবরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে ISRO। এটির নির্মাণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি দেশের প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। চন্দ্রযান-২ -এর মতো কনফিগারেশন থাকলেও চন্দ্রযান-৩ -কে কিন্তু সি-২ -এর রেপ্লিকা (প্রতিরূপ) বলা যাবে না। তবে চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার যেহেতু এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করছে, তাই আলাদা করে এবারে আর নতুন কোনো অরবিটার পাঠানো হবে না। জানা গিয়েছে যে, নতুন চন্দ্রযানে কেবল ল্যান্ডার, রোভার থাকবে। সেক্ষেত্রে এবার চন্দ্রযান-৩ -কে হাতিয়ার করে ভারত সত্যি সত্যিই এক বিরল নজির গড়তে পারবে কি না, তা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে।