NASA: ফেমালহাউট নক্ষত্রমন্ডলীর গোপন তথ্য সামনে আনল নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ওপারে, প্রায় ২৫ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ফেমালহাউট নক্ষত্রমণ্ডলী বরাবরই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চর্চা ও আলোচনার মধ্যে থেকেছে। এই চর্চার মধ্যেই, নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ এই বিষয়ে আরো অনেক অজানা তথ্য সামনে আনল। সম্প্রতি অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং নাসা– র অন্তর্গত জেট প্রপালশান ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা নেচার অ্যাস্ট্রোনমির একটি গবেষণায় এই রহস্যপূর্ণ নক্ষত্রমণ্ডলী সম্পর্কে একাধিক অজানা তথ্য প্রকাশ করেছেন।
৪৪০ মিলিয়ন বছরের ফেমালহাউটের চারপাশে রয়েছে একটি ধ্বংসাবশেষের ক্ষেত্র। এই ধ্বংসাবশেষের ক্ষেত্র সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা ১৯৮৩ সাল থেকে জানেন, কিন্তু তারা যা জানতেন না তো হলো এই নক্ষত্রমণ্ডলীর চারপাশে একটি নয়, রয়েছে তিন – তিনটি পৃথক ধ্বংসাবশেষ। পৃথক তিনটে বেল্টের এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সবথেকে ভিতরের বেল্টটিকে সৌরজগত প্রদক্ষিণ করতে থাকা গ্রহাণুমণ্ডলীর বেল্টটির সঙ্গে তুলনা করা যায়। এটি নক্ষত্র থেকে ৭ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট থেকে আরম্ভ করে প্রায় ৪০ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট পর্যন্ত বিস্তৃত। যদিও সরাসরি এই তথ্য সামনে আসার আগেই বিজ্ঞানীরা বলে দিয়েছিলেন, সম্ভবত এই বেল্টটি ফেমালহাউটের ভিতরে অবস্থিত গ্রহাণুমণ্ডলীর তুলনায় প্রায় ১০গুণ বেশি প্রশস্ত।
কিন্তু সবথেকে বেশি বিস্মিত করে যে বিষয়টি সেটি হল, দ্বিতীয় ধ্বংসাবশেষের এই বেল্টটি ভিতরের নক্ষত্রমণ্ডলীর বাইরে কক্ষপথের সঙ্গে ২৩ ডিগ্রী অবস্থানে বেঁকে রয়েছে। বিশিষ্ট ও প্রধান গবেষক আন্দ্রেস গাস্পারের মতে নক্ষত্রমণ্ডলীর মধ্যে অবস্থিত বিশেষ কিছু গ্রহের মহাজাগতিক ক্রিয়ার ফলাফলের কারণেই এই বেল্টটি এমন অদ্ভুত আকার ধারণ করেছে। যদিও সেই বিষয়ে গবেষকরা এখনো পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।
অন্যতম বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী জর্জ রিকে ফেমালহাউট সিস্টেমকে একটি রহস্য উপন্যাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন , যার পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে রহস্য ও টানটান উত্তেজনা। আর এবার সেই রহস্য উদঘাটনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে নাসা আবিষ্কৃত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। ২০২১ সালে পুনরায় নতুনভাবে ফিরে আসে এই টেলিস্কোপ এবং ফেমালহাউট রহস্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে ওঠে। এর ইনফ্রারেড সেন্সরগুলির সাহায্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধ্বংসাবশেষগুলির গঠন ও আয়তন সম্পর্কে যথাযথ ধারণা তৈরী করতে পারছেন। শুধু তাই নয় কোন কোন গ্রহের প্রভাবে নক্ষত্রমণ্ডলীর বাইরে অবস্থিত এই অদ্ভুত আকারের ধ্বংসাবশেষটি তৈরী হল সেই বিষয়েও এই টেলিস্কোপটির সাহায্যেই বিজ্ঞানীরা খুব দ্রুত আলোকপাত করতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ফেমালহাউট রহস্য মহাবিশ্বের এক বিস্ময়কর অধ্যায়। এই অধ্যায় নিয়ে জল্পনা ও উৎসাহের শেষ নেই। তবে সেইসমস্ত জল্পনা ও উৎসাহের অবসান ঘটাতে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ হয়ে উঠছে বিজ্ঞানীদের এক অন্যতম হাতিয়ার। আশা করা যায় এই নয়া হাতিয়ারের সাহায্যেই ধীরে ধীরে এবার ফেমালহাউটের যাবতীয় রহস্যের উদঘাটন ঘটবে।