Smartphone-এ লক্ষ্মীলাভ ভারতের! 14.6 কোটি ফোন কিনেছেন এদেশের মানুষ, বিক্রিতে এগিয়ে কোন ব্র্যান্ড?
সময়ের সাথে মোবাইল ফোনের গুণগত মানে আগের চেয়ে আমূল পরিবর্তন এসেছে এবং সেটির সাথে 'স্মার্ট' শব্দটি জুড়ে গেছে, সাথে সাথে এই খুদে যন্ত্রটি (চলতি ভাষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইসটি) মানব জীবনের বড় একটা অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল যে প্রায়শই মুঠোফোনে কোনো না কোনো নতুন ফিচার বা প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে, যে কারণে তেমন পুরোনো না হলেও অনেকেই আপডেটেড থাকতে নতুন মডেলের দিকে ঝুঁকছেন। সব মিলিয়ে বাজারে স্মার্টফোন বিক্রি ব্যাপক বেড়েছে। এক্ষেত্রে, সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ডেটা কর্পোরেশন বা IDC যে নতুন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে এই বিক্রয় হার সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। আসলে মার্কেট অ্যানালিস্ট এই প্রতিষ্ঠানটি গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ভিত্তিতে তাদের রিপোর্ট প্রস্তুত করেছে, আর তাতে দেখা গেছে যে এই বছর ভারতের বাজারে বিভিন্ন মোবাইল ব্র্যান্ড ১৪৬ মিলিয়ন (১৪.৬ কোটি) ফোন বিক্রি করেছে। নিঃসন্দেহে এই অঙ্কটা বিশাল! তবে এর সাথে স্মার্টফোনের ASP বা অ্যাভারেজ সেলিং প্রাইস (গড় বিক্রয় মূল্য) ২৫৫ ডলারের (প্রায় ২১,০০০ টাকা) রেকর্ড গড়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৪ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি। আসুন, এখন IDC রিপোর্টের মূল হাইলাইটগুলি এক নজরে দেখে নেওয়া যাক…
গত বছর বাজারে সবচেয়ে বেশি স্মার্টফোন বিক্রি করেছে এই ব্র্যান্ডগুলি
- এন্ট্রি লেভেল সেগমেন্টে (গড় ৮,৩০০ টাকা মূল্যের) স্মার্টফোনের বিক্রি ২০২৩ বছরে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই ধরণের ফোনগুলির থেকেই মার্কেট শেয়ারের ২০ শতাংশ উঠে এসেছে৷ জানিয়ে রাখি যে, এই সেগমেন্টের শিপিংয়ে শাওমি (Xiaomi) এগিয়ে আছে, আর তার পরে আছে পোকো (Poco) এবং স্যামসাং (Samsung)।
- মাস বাজেট অর্থাৎ প্রায় ৮,৩০০ টাকা থেকে ১৬,৬০০ টাকা দামের স্মার্টফোনগুলির বিক্রি বছর শেষে ৪৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই সেগমেন্টের বেশি বিক্রি হয়েছে ভিভো (Vivo), রিয়েলমি (Realme) এবং স্যামসাংয়ের ফোন।
- এন্ট্রি প্রিমিয়াম বা মিড রেঞ্জার ক্যাটাগরির ফোনগুলির (যাদের আনুমানিক দাম ১৬,৬০০ টাকা থেকে ৩৩,০০০ টাকা) বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য কোনো বৃদ্ধি বা ক্ষতি দেখা যায়নি – মানে এদের বিক্রি বাড়েওনি আবার কমেওনি। এই সেগমেন্টের মার্কেট শেয়ার রয়ে গেছে ২১ শতাংশ। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ভিভো এবং ওয়ানপ্লাস (OnePlus)।
- মিড প্রিমিয়াম (প্রায় ৩৩,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা দামের) স্মার্টফোনের শেয়ার ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, এই ক্যাটেগরি ২৭ শতাংশের চিত্তাকর্ষক বৃদ্ধি দেখেছে। আর এই ধরণের ফোন বিক্রিতে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ওয়ানপ্লাস, যার মার্কেট শেয়ার ৩৫ শতাংশ।
- প্রিমিয়াম তথা ফ্ল্যাগশিপ সেগমেন্টে (প্রায় ৫০,০০০ টাকা থেকে ৬৬,০০০ টাকা দামের) Apple iPhone 13, Samsung Galaxy S23, S23 FE এবং OnePlus 11-এর মতো ফোনগুলি গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায় ছিল৷ এক্ষেত্রে স্যামসাং, অ্যাপলকে পেছনে ফেলে তার শিপমেন্টের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে।
- সুপার প্রিমিয়াম ক্যাটেগরি মানে ৬৬,০০০ টাকা বা তারও বেশি দামের স্মার্টফোন বিক্রিতেও অ্যাপল এবং স্যামসাং এগিয়ে ছিল। আশ্চর্যের ব্যাপার যে, বাজারের এই অংশটি ৮৬ শতাংশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করেছে।
মার্কেট শেয়ারের নিরিখে ভারতের সেরা-দশ স্মার্টফোন ব্র্যান্ড
ভারতের বাজারে ১৭% তথা সবচেয়ে বেশি মার্কেট শেয়ার অর্জন করেছে স্যামসাং। এদিকে ভিভোর মার্কেট শেয়ার ২০২৩ সালে ১৫.২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ১৪.১ শতাংশ। আবার রিয়েলমি এবং শাওমি মার্কেট শেয়ারের নিরিখে যথাক্রমে তৃতীয় এবং চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে, কেননা উভয়েরই শিপমেন্ট হ্রাস পেয়েছে। একইভাবে মার্কেট শেয়ার কমে ১০.৩ শতাংশ হলেও পঞ্চম স্থানে রয়েছে ওপ্পো। প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড হিসাবে অ্যাপল এবং ওয়ানপ্লাস ষষ্ঠ এবং সপ্তম অবস্থান দখল করেছে, এদের মার্কেট শেয়ার যথাক্রমে ৩৮.৬ শতাংশ এবং ৪৮.৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া সাশ্রয়ী মূল্যে দুর্দান্ত স্পেসিফিকেশন অফার করে পোকো, ইনফিনিক্স (Infinix) এবং টেকনো (Tecno)-র মতো ব্র্যান্ডগুলি বাজারের সেরা-দশ ব্র্যান্ডের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
ভারতের স্মার্টফোন বাজার সাক্ষী হয়েছে এইসব দৃষ্টান্তেরও
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে শুধুমাত্র বাজেট সেগমেন্টে জন্য মোট ৭৯ মিলিয়ন (৭.৯ কোটি) ৫জি (5G) স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে – এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি শিপিং হয়েছে Apple iPhone 13, iPhone 14, Samsung Galaxy A14 5G, Vivo T2x এবং Redmi 12 5G মডেলের। আর, মিডিয়াটেক (MediaTek) চিপসেট চালিত স্মার্টফোনগুলির বিক্রি ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে কোয়ালকমের (Qualcomm) শেয়ার ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। Vivo T2x, Redmi A2, এবং Realme C55 ২০২৩ সালে মিডিয়াটেক ভিত্তিক সবচেয়ে বেশি শিপিং হওয়া মডেল।