স্টুডেন্টদের অনলাইন শিক্ষার সুযোগ দিতে সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল সংগ্রহ করছেন এই সাংবাদিক

বিশ্ব জুড়ে করোনা মহামারির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য অফিসের কাজ, শিক্ষাব্যবস্থা সবকিছুই অনলাইনে করতে হচ্ছে। এর ফলে তৈরি হচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইড, কারণ সমাজের সব শ্রেণির মানুষের স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট কেনার মতো ক্ষমতা নেই। তবে আনন্দের বিষয়, এই ধরনের মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এগিয়ে আসছেন অনেকেই। ইন্দোনেশিয়ার এক সাংবাদিক ঘিনা ঘালিয়া এবং আরো কয়েকজন মিলে অনলাইন শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিশুদের জন্য সেকেন্ড-হ্যান্ড মোবাইল ফোন সংগ্রহের বিষয়ে মনস্থির করে। দেশের প্রত্যন্ত এলাকা-সহ অন্যান্য জায়গাতেও তারা মোট ৩০০ টি মোবাইল ফোন বিলি করেছে। চলুন দেখে নিই তাদের এই উদ্যোগ কীভাবে শুরু হল।

কথায় বলে, চাহিদাই হল আবিষ্কারের জননী। এই অভিনব উদ্যোগের পিছনেও চাহিদার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। একদিন ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী শহরে ঘিনা ঘালিয়ার বাড়িতে একজন আবর্জনা সংগ্রহকারী আসে। সে তার সন্তানের জন্য একটি পুরোনো মোবাইল ফোন চায়, যাতে ইন্টারনেট চালানো সম্ভব হবে। এই ঘটনার মাধ্যমে ঘিনা বুঝতে পারে যে এমন অনেক শিশুই আছে যাদের কাছে অনলাইন শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কোন ডিভাইস নেই।

প্যানডেমিক শুরুর পর থেকেই ঘিনা জাকার্তার আরো ১১ জন সাংবাদিকের সঙ্গে একটি দল গঠন করেছিল। তাদের কাজ ছিল দুঃস্থ মানুষদের কাছে খাদ্য এবং অর্থ পৌঁছে দেওয়া। ঘিনার উৎসাহে এই দলের মধ্য দিয়েই তারা দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন শিক্ষার জন্য মোবাইল ফোন পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। সোশ্যাল মিডিয়ার তারা এই ক্যাম্পেইন চালায়। ক্যাম্পেইনে বিপুল পরিমাণ সাড়া পাওয়া যায়। কেউ সেকেন্ড-হ্যান্ড ফোন দিয়ে, তো কেউ অর্থ দিয়ে সাহায্য করে। নভেম্বর মাসে মোট ২০০ টি মোবাইল ফোন সংগৃহীত হয়। ক্যাশ ডোনেশন পাওয়া যায় ৩৫,০০০ ডলার, যা দিয়ে তারা আরো কিছু মোবাইল ফোন ও প্রিপেড ইন্টারনেটের টাকা জমিয়ে ফেলে।

ঘিনাদের উদ্যোগে এখনও অব্দি প্রায় ৩০০ ফোন বিলি করা হয়েছে গোটা জাকার্তা জুড়ে। বাদ থাকেনি দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিও। তাদের এই উদ্যোগের ফলে লাভবান হয়েছে অনেকেই। সাধারণত স্কুলপড়ুয়া শিশুদের নিজস্ব মোবাইল থাকতো না। ফলে মা-বাবা কাজে চলে গেলে সমস্যা হত পড়াশোনার। ডেনি সায়ুটি পেশায় একজন মোটরসাইকেল ট্যাক্সি ড্রাইভার। সে কাজে বেরিয়ে গেলে তার ১৬ বছর বয়সী ছেলের মোবাইল ফোনে পড়াশোনার সুযোগ ব্যাহত হত। সমস্যা হত অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রেও। সায়ুটি এরপর ঘিনাদের দলের উদ্দেশ্যে চিঠি লেখে। এক মাস পরেই তার ছেলের জন্য চলে আসে একটি মোবাইল ফোন। তার মতো আরো অনেকেই এই উদ্যোগের ফলে লাভবান হয়েছে। প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে সমাজের সর্বস্তরে শিক্ষার প্রসারে ইন্দোনেশিয়ার এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।