NASA: গ্রহাণুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত নাসা’র জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ, আর কি মহাকাশের ছবি তুলতে পারবে?

মহাকাশে ঘটমান অজস্র ঘটনার মধ্যে মাত্র কিছু সংখ্যার সাক্ষী থাকে পৃথিবী। কিন্তু বিজ্ঞানীরা নিজেদের জিজ্ঞাসু স্বভাবের বশে মহাবিশ্বের প্রতিনিয়ত ঘটে চলা ঘটনাগুলির সম্পর্কে জানতে নানাবিধ যন্ত্রাদি আবিষ্কার করে চলেছে। একই সাথে বিবিধ ‘স্পেস ইনস্ট্রুমেন্ট’ ভূ-মন্ডলের বাইরে প্রেরণ করার মাধ্যমে বহির দুনিয়ার কর্মকান্ড সম্পর্কে গবেষণাও করছেন। যেমন, ‘ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ ওরফে NASA (নাসা) গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে মহাকাশে একটি অতীব শক্তিশালী স্পেস টেলিস্কোপ পাঠিয়ে ছিল, যার নাম জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’ (JWST)। এর কাজ ‘ডিপ স্পেস’ এর চিত্র সংগ্রহ করা। বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী এই স্পেস টেলিস্কোপ গত মে মাসে একটি গ্রহাণুর আঘাতে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর সামনে এলো।

উল্কাপিণ্ডের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হল নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ (NASA’s James Webb Telescope Damaged After Being Hit By meteorite)

‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি’ (ESA) এবং ‘কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি’ (CSA) -এর যৌথ সহযোগিতায় ‘ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (NASA) জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বা সংক্ষেপে JWST তৈরি করেছিল। এটিকে একাধিক অ্যাডভান্স এবং নব্য প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছিল। এই টেলিস্কোপ মহাকাশের ঘূর্ণমান অন্যান্য দূরবীক্ষণ যন্ত্রগুলির মধ্যে সর্বাধিক বৃহত্তম মিরর বা আয়না বহন করে, যার সাহায্যে মহাকাশে ঘটমান ঘটনাগুলির চিত্র সংগৃহীত হয়।

তবে বিশ্ব-ব্রম্ভাণ্ডের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের অবগত করার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের দীর্ঘ সময়কাল পর্যন্ত কার্যকর তথা অক্ষত থাকা আবশ্যক। কিন্তু ২০২২ সালের মে মাসে গ্রহাণুর অংশবিশেষ বা উল্কাপিণ্ড আছড়ে পড়ার কারণে টেলিস্কোপটির অবস্থা এখন বেশ শোচনীয়। ফলে নাসার এই প্রকল্পের আয়ু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বহু বিজ্ঞানী।

ফোর্বসের মতে, একদল বিজ্ঞানী JWST স্পেস টেলিস্কোপ বর্তমানে কিরূপ পারফরম্যান্স প্রদান করছে সেই সম্বন্ধে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। যেখানে তারা এমন কয়েকটি সমস্যার উল্লেখ করেছেন, যা “সংশোধন করা যাবে না।” আবার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের অনুমানিত জীবনকাল সম্পর্কে গবেষকরা বলেছেন যে, “বর্তমানে অনিশ্চয়তার সবচেয়ে বড় কারণ হল মাইক্রো মেটিওরয়েড আঘাত জনিত দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব, যা টেলিস্কোপের প্রাইমারি আয়নাকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করেছে।”

বিজ্ঞানীরা আরো জানিয়েছেন যে, গত বছর উৎক্ষেপণের পর থেকে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি মোট ছয়টি মাইক্রো মেটিওরাইট বা উল্কা দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচটি উল্কাপিণ্ডের সাথে সংঘর্ষের পর খুবই নগণ্য পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল টেলিস্কোপটি। কিন্তু ষষ্ঠ উল্কাপিণ্ডটি JWST-র ব্যাপক পরিমান ক্ষতি করেছে।

এই গ্রহাণু বর্ষণ (asteroid strike) সম্পর্কে গবেষকরা আরও বলেছেন যে, “২২ থেকে ২৪ মে ২০২২ এর মধ্যে উল্কাপাতের কারণে সেগমেন্ট সি৩ -তে যে আঘাত লেগেছিল, তার জন্য টেলিস্কোপের সামগ্রিক গঠনে অসংশোধনযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। যদিও, সম্পূর্ণ টেলিস্কোপ লেভেলে এই প্রভাবটি যৎসামান্য ছিল, কারণ টেলিস্কোপের একটি ছোট অংশ শুধুমাত্র প্রভাবিত হয়েছিল এই ঘটনার দরুন।”

যাইহোক, যেহেতু টেলিস্কোপের একটি প্যানেল শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেহেতু এই আঘাতের কারণে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ছবি তোলার ক্ষমতা মোটেও প্রভাবিত হবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞের দল। এক্ষেত্রে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য, উক্ত স্পেস দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ইঞ্জিনিয়াররা প্রথম থেকেই জানতেন যে এর আয়না এবং সান-শিল্ড অনিবার্যভাবে ধীরে ধীরে মাইক্রো মেটিওরয়েডের প্রভারে ক্ষয়প্রাপ্ত হবে।

তদুপরি, বিজ্ঞানীদের অনুমান, জেমস ওয়েবের ডিটেক্টরগুলি চার্জড পার্টিকালস বা কণা দ্বারা ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে। আর, সান-শিল্ড এবং উদ্ভাবনী পাঁচ-স্তরীয় নিরোধক (innovative five-layer insulation) মহাকাশ আবহাওয়ায় থেকে ক্ষয়িত হবে। আর যেহেতু টেলিস্কোপের প্রাইমারি আয়না মহাকাশে উন্মুক্ত অবস্থায় আছে, সেহেতু মাইক্রো মেটিওরয়েড স্ট্রাইক এড়িয়ে অক্ষত থাকা JWST -এর পক্ষে একান্তই কঠিন হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের বড়দিনে অর্থাৎ ২৫শে ডিসেম্বর জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপটিকে মহাকাশে প্রেরণ করা হয়েছিল এবং এটির নির্মাণে পুরো ৯.৭ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়। আমেরিকার স্পেস এজেন্সি নাসা চলতি মাসের শুরুর দিকে, আলোচ্য টেলিস্কোপ দ্বারা ক্যামেরাবন্দি করা প্রথম ছবি প্রকাশ্যে এনেছিল৷