ভারত থেকে ভ্যাকসিনের ফর্মুলা চুরির চেষ্টা, অভিযোগ চীনা হ্যাকারদের বিরুদ্ধে

Avatar

Published on:

এবার চীনা আগ্রাসনের সম্মুখীন হলো ভারতের দুই কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন উৎপাদক সংস্থা ভারত বায়োটেক এবং সেরাম ইনস্টিটিউট। আজ্ঞে হ্যাঁ, চীনা-সমর্থনপুষ্ট একদল হ্যাকার সম্প্রতি এই দুই সংস্থার আইটি ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও তা থেকে ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত জরুরী তথ্য চুরির চেষ্টা চালায়। সিঙ্গাপুর এবং টোকিও নির্ভর সাইবার ইন্টেলিজেন্স ফার্ম সাইফার্মা (Cyfirma) সর্বপ্রথম এই সংবাদ প্রকাশ্যে আনে। সাইফার্মার চীফ এক্সিকিউটিভ কুমার রীতেশ নিজেও বিষয়টি নিয়ে একাধিক মন্তব্য করেছেন।

আসলে কোভিড ভ্যাক্সিন উৎপাদন ও বন্টনে ভারত প্রতিপক্ষ চীনকে যথাযোগ্য টক্কর দিয়েছে। ভারত বায়োটেক দ্বারা প্রস্তুত কোভ্যাক্সিন (Covaxin) এবং সেরামের কোভিশিল্ড (Covishield) বা অ্যাস্ট্রাজেনেকা(AstraZeneca) – দুটি ভ্যাক্সিনের ওপরেই দেশবিদেশের অজস্র মানুষ আস্থা দেখিয়েছেন। সেই কারণেই চীনা হ্যাকিং গ্রুপ APT10 যারা স্টোন পান্ডা (Stone Panda) নামেও পরিচিত, ভারতীয় ভ্যাক্সিন নির্মাতাদের সিস্টেমকে নিশানা হিসেবে বেছে নেয়। এক্ষেত্রে তারা সংস্থাদ্বয়ের আইটি পরিকাঠামো এবং সাপ্লাই চেন সফ্টওয়্যারের দুর্বলতা ও ত্রুটিগুলি খুঁজে বের করে আক্রমণ শানায়, যা আসলেই অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়।

মূলত ভ্যাক্সিন উৎপাদন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিয়ে ভারতীয় সংস্থাগুলিকে বিপদে ফেলাই যে চীনা হ্যাকারদের আশু লক্ষ্য, সেটা বুঝতে কারোর কোন অসুবিধা হয়না। তাছাড়া সাইফার্মার (Cyfirma) পক্ষ থেকে কুমার রীতেশ আমাদের এই ধারণায় সিলমোহর দিয়েছেন। বিশেষ করে সেরাম ইনস্টিটিউটের একাধিক সার্ভারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে হ্যাকাররা তাদের কার্যসিদ্ধি করতে চেয়েছে বলেও তিনি দাবী করেছেন।

সাইফার্মার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরেও চীনের বিদেশমন্ত্রক এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। তাছাড়া সেরাম বা ভারত বায়োটেক – দুটি সংস্থাই এক্ষেত্রে চুপ।

তবে জনপ্রিয় ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি যে বিভিন্ন রাষ্ট্র দ্বারা সমর্থিত অসৎ প্রতিষ্ঠানের হুমকির মুখে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাছাড়া গত নভেম্বরে মাইক্রোসফট (Microsoft) স্বয়ং আমাদের হ্যাকারদের গতিবিধি সম্পর্কে কিছু তথ্য জানিয়েছিল। তাদের দাবী অনুযায়ী হ্যাকার দলগুলি ভারত, কানাডা, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের ভ্যাক্সিন নির্মাতাদের ওপর নজরদারি চালানোর পাশাপাশি তাদের তথ্য চুরির চেষ্টা করছে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা Pfizer Inc এবং তাদের জার্মান সহযোগী BioNTech SE গতবছরের ডিসেম্বর মাসেই জানিয়েছিল যে হ্যাকারেরা বেআইনিভাবে তাদের কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন প্রস্তুতি সংক্রান্ত তথ্যাবলি অ্যাক্সেসের করতে চাইছে।

উল্লেখ্য, গতবছর থেকে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে, ভারত ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তিক্ত থেকে তিক্ততর হয়ে উঠেছে। সীমান্ত সংঘর্ষে উভয়পক্ষের সেনা মৃত্যুর মতো ঘটনার প্রভাব এসে পড়েছে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে। ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছে চীনের একাধিক অ্যাপ্লিকেশন। উত্তেজনা প্রশমনের জন্য দুই দেশই নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবু আগ্রাসন থামার কোন লক্ষণ এখনো যে নেই, চীনা হ্যাকারদের হামলার ফলে সেই ঘটনা আরো একবার প্রমাণ হলো।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥