WhatsApp গ্রুপে আপত্তিকর কনটেন্ট পোস্ট হলে দায়ী থাকবে না গ্রুপ অ্যাডমিন: জানাল কেরালা হাইকোর্ট

Avatar

Published on:

বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্সট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম WhatsApp (হোয়াটসঅ্যাপ)-এর সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। আর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথাও আমরা প্রায় সকলেই জানি। এক বা একাধিক ব্যক্তি গ্রুপ অ্যাডমিন হিসেবে কাদের নিয়ে গ্রুপটি তৈরি হবে, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেন এবং তাদের সকলকে এক ছাতার তলায় নিয়ে এসে পরিচালনা করেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই হর্তাকর্তা-বিধাতা হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ অ্যাডমিনদের গ্রুপকে অপারেট করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু অতিরিক্ত ক্ষমতা রয়েছে।

তবে যত ক্ষমতাই হাতে থাক, গ্রুপে কেউ কোনো অসৎ কার্যকলাপ করলে তার দায় যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাশাপাশি গ্রুপ অ্যাডমিনের ঘাড়েও চাপবে, সে সম্পর্কে বহুবার নানা খবর সামনে এসেছে। গ্রুপে কে কী ধরনের কনটেন্ট শেয়ার করছে তার ওপর ভিত্তি করে বা কেউ কোনো অবৈধ কাজ করলে তার ফলস্বরূপ কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে সাথে গ্রুপ অ্যাডমিনকেও জেলে যেতে হতে পারে – এমন খবর হামেশাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করে, এবং এরকম বেশ কিছু ঘটনাও হালফিলে প্রত্যক্ষ করা গেছে। তবে এবার এই দায় থেকে গ্রুপ অ্যাডমিনদের মুক্তি দিল কেরালা হাইকোর্ট। আসুন বিষয়টি সম্পর্কে একটু বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

কেরালা হাইকোর্টের নতুন সিদ্ধান্ত, গ্রুপ অ্যাডমিনদের স্বস্তি

কেরালা হাইকোর্ট স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, কোনো সদস্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোনোরকম আপত্তিকর কনটেন্ট পোস্ট করলে, তার জন্য গ্রুপ অ্যাডমিনকে দায়ী করা হবে না। বিচারপতি কৌসর এডপ্পাগথ জানিয়েছেন যে, এই ধরনের মামলায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ অ্যাডমিনকে অপরাধী হিসেবে দায়ী করা হবে এরকম কোনো আইন এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়নি। নিঃসন্দেহে কেরালা হাইকোর্টের এই সাম্প্রতিক রায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ অ্যাডমিনদের চরম স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ কী এমন ঘটনা ঘটল যাতে কেরালা আদালত এইরকম রায় দিতে বাধ্য হল?

রিপোর্ট অনুযায়ী, এই পুরো মামলাটি চাইল্ড পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত। ২০২০ সালে ‘Friends’ নামক একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেন জনৈক এক ব্যক্তি, আর সে কারণেই তিনি ওই গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি তার এক বন্ধুকে কো-অ্যাডমিন হিসেবে ওই গ্রুপটিতে শামিল করেন। কিন্তু কো-অ্যাডমিন হিসেবে যুক্ত হয়ে ছোটো বাচ্চাদের অশ্লীল ভিডিও গ্রুপে পোস্ট করেন ওই ব্যক্তি। ফলে স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী, কো-অ্যাডমিনের পাশাপাশি গ্রুপ অ্যাডমিনকেও তথ্যপ্রযুক্তি আইনের দোহাই দিয়ে দোষী ঠাওরানো হয়।

এই ঘটনায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ অ্যাডমিনের দায়ের করা আবেদনের ভিত্তিতে এই মামলার শুনানির আয়োজন করা হয়। আদালতে ওই গ্রুপ অ্যাডমিন নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ বলে দাবি করেন এবং তার যাবতীয় দাবি আপাদমস্তক পর্যালোচনা করে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, সংশ্লিষ্ট গ্রুপ অ্যাডমিন এই ঘটনায় সরাসরি যুক্ত নয় এবং তার এই ধরনের অপরাধমূলক ঘটনায় যুক্ত থাকারও কোনো ইচ্ছে ছিল না। ফলে এমত পরিস্থিতিতে গ্রুপের কোনো সদস্য যদি কোনোরকম আপত্তিকর কনটেন্ট গ্রুপে শেয়ার করেন, তাহলে তার জন্য অ্যাডমিনকে কোনোভাবেই দায়ী করা যাবে না।

সেক্ষেত্রে কেরালা হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত যেরকম সংশ্লিষ্ট ঘটনায় যুক্ত থাকা অ্যাডমিনকে রেহাই দিয়েছে, সেরকম ভবিষ্যতে এই মামলার উদাহরণ দিয়ে আরও অনেক গ্রুপ অ্যাডমিনেরই হয়তো মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, এরকম ঘটনা আগে ঘটলে ইতিমধ্যেই হয়তো অনেক গ্রুপ অ্যাডমিনই এই জাতীয় ঘটনায় স্বস্তি পেতেন!

সঙ্গে থাকুন ➥