গাড়ি সংস্থাগুলির আপত্তি সত্বেও যাত্রী সুরক্ষায় ছ’টি এয়ারব্যাগ আবশ্যিক করার পথে হাঁটবে ভারত সরকার

ভারতের রাস্তায় প্রতি বছর অজস্র পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অগণিত মানুষ। পরিসংখ্যান বলছে ২০২০-তে এদেশে ৩,৫৫,০০০ পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১.৩৩ লক্ষের অধিক জনগণ। এর মধ্যে ১৩ শতাংশ হচ্ছে গাড়ির যাত্রী। কাজেই বছর বছর এই ব্যাপক সংখ্যক গাড়ির যাত্রীর মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। যে কারণে সরকারের পরামর্শ, গাড়িতে দিতে হবে কমপক্ষে ছ’টি এয়ারব্যাগ। ২০২২-এর শুরুতেই এই সংক্রান্ত খসড়া নীতি নিয়ে এসেছিল মোদি সরকার।

আর এখানেই বাধে বিপত্তি। সম্প্রতি গাড়ি সংস্থাগুলির তরফে বলা হয় যদি ৬টি এয়ারব্যাগ দিতে হয় সে ক্ষেত্রে গাড়ির দাম চড়চড়িয়ে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া তৈরি হয়ে যাওয়া গাড়িগুলিতে নতুন করে এয়ারব্যাগের সংখ্যা বাড়াতে কারিগরি পরিবর্তনের ফলেও বাড়বে খরচ। মারুতি সুজুকির তরফেও এই একই কথা জানিয়ে গাড়ির বিক্রি কমার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু নিজের জায়গা থেকে সরতে অনড় কেন্দ্র। সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে সরকারের একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক স্পষ্টত বলে দিয়েছেন, “সুরক্ষার সাথে আপোষ নয়। মন্ত্রণালয় এই নিয়মটি কার্যকর করতে চলেছে, যার নির্দেশ আসতে কিছু সময় লাগবে।”

যদিও ৬টি এয়ারব্যাগের নিয়ম কবে থেকে কার্যকর হবে, সেই সম্পর্কে কোনো তথ্য জানায়নি কেন্দ্র। তবে জানুয়ারি মাসের খসড়া নীতিতে বলা হয়েছিল, সমস্ত নতুন গাড়িতে ১ অক্টোবর থেকে ৪টি প্যাসেঞ্জার এয়ারব্যাগ এবং দু’টি সাইড অথবা কার্টেইন এয়ারব্যাগ ধরে গাড়িতে ৬টি এয়ারব্যাগ থাকা বাধ্যতামূলক। এক মাসের মধ্যে নতুন সুরক্ষা বিধি কার্যকর করা হবে বলে ঘোষণা করা হলেও এখনও পর্যালোচনার অধীন। উল্লেখ্য, ওই আর্ন্তজাতিক সংবাদ সংস্থাকে মারুতি সুজুকির এয়ারব্যাগ সম্পর্কিত দেওয়া সাক্ষাৎকারের ঠিক ক’সপ্তাহের মাথায় কেন্দ্রের তরফে এই প্রতিক্রিয়া এসেছে।

বর্তমানে চালক এবং তার পাশের যাত্রীর জন্য দু’টি এয়ারব্যাগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সরকারের হিসেব অনুযায়ী গাড়িতে আরও চারটি এয়ারব্যাগ যুক্ত হলে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ৫,৭৩৭ টাকা বাড়তি গুনতে হবে। নিজের ও যাত্রীদের সুরক্ষার কথা ভেবে যা যেকোনো গ্রাহকই দিতে রাজি হবে বলে আশা করা যায়। যদিও গাড়ির তথ্য প্রদানকারী সংস্থা জাটো ডায়নামিকস (JATO Dynamics)-এর তথ্য অনুযায়ী, যদি আরও চারটি এয়ারব্যাগ যোগ করতে হয়, সে ক্ষেত্রে ১৭,৬০০ টাকা ছাড়াও গাড়ির কারিগরিতে অদলবদল ঘটানোর জন্য আরও কিছু অতিরিক্ত খরচ হবে।

যদিও সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ‘খরচের বিষয়টি অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। মন্ত্রকের তরফে দেশে এয়ারব্যাগ তৈরিতে দাম ও সময়ের প্রসঙ্গে নির্মাতাদের সাথে কথা বলা হয়েছে।” সরকারের দাবি ২০২০-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী এয়ারব্যাগের সাথে সিট বেল্টের ব্যবহার হলে ৩৯,০০০-র এক-তৃতীয়াংশ মানুষের জীবন বাঁচানো যেত। কেন্দ্রের বক্তব্য, “সংস্থাগুলি নিজে থেকে এয়ারব্যাগ বাড়াবে না, তাই আমরা নয়া বিধি চালু করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চলেছি।”