বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেবে, নয়া আবিষ্কারে সাড়া ফেললো কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা
মাত্রাতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড (CO2) নির্গমনের থেকে বিশ্বকে সুরক্ষিত রাখতে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এবার এক অভিনব পন্থার সন্ধান দিলেন। সদ্য তারা একটি ব্যাটারি-সদৃশ ডিভাইস আবিষ্কার করেছেন, যা পরিবেশ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিতে সক্ষম। মূলত চার্জিংয়ের সময় আলোচ্য ডিভাইস বাতাস থেকে CO2 শোষণ করে। এরপর চার্জ বন্ধ করলে এই সুপার ক্যাপাসিটর ডিভাইস এমন নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে CO2 নিঃসরণ ঘটায়, যা থেকে সেটি ব্যবহারের জন্য পুনরুদ্ধার অথবা অত্যন্ত ধীরে ধীরে পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব। সুতরাং বলাই বাহুল্য যে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এহেন আবিষ্কার ভবিষ্যতে CO2 দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হতে পারে।
পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত CO2 নির্গমন রোধ করবে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের অাবিষ্কার
উল্লেখ্য, EurekAlert পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি বছর অন্তত প্রায় ৩৫ বিলিয়ন টন CO2 পরিবেশে নির্গত হয়। অনেকদিন ধরেই বিজ্ঞানীরা এই বিপুল পরিমান কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূষণ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছেন। এবার কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের আবিষ্কারে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী ক্রমবর্ধমান CO2 নির্গমন রোধের দিশা মিলেছে।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগেও বিজ্ঞানী এবং গবেষকেরা পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত CO2 নির্গমন রোধের কার্যকর পন্থা খুঁজে পেয়েছেন। যদিও সেইসব প্রযুক্তি কাজে লাগাতে প্রচুর পরিমাণ শক্তির পাশাপাশি বিপুল অর্থ-ব্যয় প্রয়োজন। কিন্তু কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা যে সুপার ক্যাপাসিটর ডিভাইস আবিষ্কার করেছেন তা একেবারে ন্যূনতম খরচে চার্জিংয়ের সময় কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে, যা একে পূর্বতন যাবতীয় প্রযুক্তির নিরিখে আলাদা করেছে।
আবিষ্কৃত নতুন সুপার ক্যাপাসিটর যন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও কর্মপদ্ধতি
আকৃতির দিক থেকে নবাবিবিষ্কৃত সুপার ক্যাপাসিটর যন্ত্রটি কয়েনের মতো ক্ষুদ্র। এটি নারকেলের মালা এবং সমুদ্রের নোনা জলের সাহায্যে কাজ করে। অর্থাৎ নতুন সুপার ক্যাপাসিটর তৈরী নামমাত্র খরচের ব্যাপার। তাছাড়া এটি তৈরীর জন্য জরুরি উপাদান পরিবেশে সুলভ। ফলে সব দিক থেকেই এটি দূষণ রোধে কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।
জানিয়ে রাখি, নতুন সুপার ক্যাপাসিটর যন্ত্রের ইলেকট্রোডগুলি কার্বনগঠিত, যা তৈরীর ক্ষেত্রে নারকেলের পরিত্যক্ত মালা কাজে লাগানো হয়েছে। যন্ত্রটির কাজের পদ্ধতি বোঝাতে গিয়ে পূর্বোক্ত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সদস্য গবেষণাকারী ড. আলেকজান্ডার ফোর্স জানিয়েছেন যে, এর (যন্ত্রের) প্লেটদ্বয়ের মধ্যে অতি ধীর গতিতে সঞ্চালন করলে তার দ্বারা প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ CO2 শোষণ সম্ভব। এভাবে চার্জিং-ডিসচার্জিং প্রক্রিয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ অপেক্ষাকৃত স্বল্প খরচের ব্যাপার বলেও তিনি উল্লেখ করেন। লন্ডনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের এই খোঁজ সম্প্রতি ন্যানোস্কেল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।