একবছরের মধ্যে ৫০০ শহরে মিলবে 5G পরিষেবা, কিনতে হবে নতুন ফোন
আর কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত ভারতবাসীর অধীর অপেক্ষার অবশেষে অবসান হতে চলেছে, কেননা আগামী অক্টোবরেই গোটা দেশে রোলআউট হচ্ছে 5G (৫জি) পরিষেবা। এ পর্যন্ত পাওয়া খবরের ভিত্তিতে আশা করা যাচ্ছে যে, Jio (জিও) ও Airtel (এয়ারটেল) দীপাবলির আগেই তাদের পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সার্ভিস লঞ্চের কথা ঘোষণা করতে পারে। পাশাপাশি, Vodafone Idea (ভোডাফোন আইডিয়া) বা Vi (ভিআই)-এর 5G পরিষেবা খুব দ্রুত লঞ্চ হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। সবমিলিয়ে বলতে গেলে, পরবর্তী প্রজন্মের দুরন্ত গতির নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে হলে ইউজারদেরকে আর মাত্র কয়েকটা দিন পার করতে হবে বললেই চলে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫জি লঞ্চের জন্য সবকটি বেসরকারি টেলিকম অপারেটরই একদম চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার বা সিওএআই (COAI) ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ডঃ এস পি কোছার জানিয়েছেন যে, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের ৫০০টি শহরে চালু হবে ৫জি পরিষেবা; আর খুব শীঘ্রই এই সার্ভিস শুরুর সুনিশ্চিত দিনক্ষণ প্রকাশ্যে আসবে। তাঁর কথায়, ৫জি ট্রায়ালের সময় বহু প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সব বাধা দূর করে বর্তমানে টেলিকম অপারেটরগুলি সারা দেশে এই সার্ভিস রোলআউট করার জন্য একদম প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। ফলে আপামর দেশবাসী খুব শীঘ্রই 'রকেটের' গতির নেট সার্ভিস ব্যবহার করতে সক্ষম হবেন। কারণ নতুন ৫জি নেটওয়ার্ক, ৪জি (4G)-র তুলনায় ১০০ গুণ বেশি ইন্টারনেট স্পিড দিতে পারবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
কোছার আরও বলেছেন যে, এই পরিষেবা চালু হলে দেশের সামগ্রিক পরিকাঠামোয় অনেক পরিবর্তন দেখা দেবে এবং নতুন অনেক চ্যালেঞ্জও উঠে আসবে। তবে সবকিছুর মোকাবিলা করার জন্য টেলিকম কোম্পানিগুলি যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে, ফলে দেশের জনগণ একদম সাবলীলভাবে পরবর্তী প্রজন্মের নেট সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া কোছারের এক বিবৃতিতে ৫জি সম্পর্কিত আরও কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। সেক্ষেত্রে ৫জি ব্যবহার করতে হলে এই বিষয়গুলি সবাইকে মাথায় রাখতেই হবে!
দুরন্ত গতির নেট সার্ভিস ব্যবহার করতে হলে 5G সাপোর্টেড স্মার্টফোন থাকা একান্ত আবশ্যক
৫জি সার্ভিস রোলআউট হওয়ার সাথে সাথে মূলত যে প্রশ্নটি আপামর জনসাধারণের মাথায় ঘোরাফেরা করছে, সেটি হল – ঠিক কী ধরনের ফোনে এই পরিষেবা একদম অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে? এই কৌতুহলের প্রত্যুত্তরে কোছার সম্প্রতি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, দুরন্ত গতির ৫জি সার্ভিসের মজা উপভোগ করতে চাইলে ইউজারদের কাছে ৫জি সাপোর্টেড স্মার্টফোন থাকা একান্ত অবশ্যক। অর্থাৎ সোজা কথায় বললে, ৪জি ফোনে কোনোমতেই ৫জি পরিষেবা ব্যবহার করা যাবে না; সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের অবিলম্বে নতুন কোনো ৫জি ফোন কিনে ফেলতে হবে। সেইসাথে ব্যবহারকারীদের মুঠোফোনে অবশ্যই এমন ব্যান্ডও মজুত থাকতে হবে, যাতে ভারতের টেলিকম অপারেটররা তাদের ৫জি পরিষেবা সরবরাহ করবে। তিনি আরও বলেছেন যে, বর্তমানে দেশে উপলব্ধ বেশিরভাগ ৫জি হ্যান্ডসেটের দাম প্রায় ২০,০০০ টাকার কাছাকাছি। তাই মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে আগামী দিনে আরও কম দামে ৫জি ফোন বাজারে নিয়ে আসতে হবে।
কোছারের কথায়, গোটা দেশে দুটি বিকল্পে ৫জি পরিষেবা চালু করা হতে পারে – একটি স্ট্যান্ড অ্যালোন এবং অপরটি নন-স্ট্যান্ড অ্যালোন। স্ট্যান্ড অ্যালোনের ক্ষেত্রে ইউজাররা কেবলমাত্র ৫জি পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যদিকে, নন-স্ট্যান্ড অ্যালোনে ৫জি-র পাশাপাশি ৪জি সার্ভিসও ব্যবহার করা যাবে। প্রাথমিকভাবে সারা দেশে নন-স্ট্যান্ড অ্যালোন পরিষেবা চালু হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সার্ভিসের আগমনের পর ৪জি পরিষেবা ব্যবহার করতে হলে ইউজারদেরকে তা নন-স্ট্যান্ড অ্যালোন প্ল্যানের আওতায় রিচার্জ করতে হবে।
প্রতি তিনশো মিটার অন্তর একটি ছোটো টাওয়ারের প্রয়োজন পড়বে
কোছার জানিয়েছেন যে, ৫জি সার্ভিস রোলআউটের ক্ষেত্রে টেলিকম অপারেটরদেরকে টাওয়ার সম্পর্কিত বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সবথেকে বড়ো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। এর মূল কারণ হল, এই মুহূর্তে প্রতি তিন কিলোমিটারে একটি করে টাওয়ার রয়েছে; তবে ৫জি পরিষেবা শুরু করতে হলে প্রতি তিনশো মিটারে একটি ছোটো টাওয়ারের প্রয়োজন হবে। এর জন্য বিদ্যমান বিদ্যুৎ বা টেলিফোনের খুঁটি ব্যবহার করা হবে, যার মধ্যে একটি ছোটো অ্যান্টেনা লাগানো থাকবে। তবে এই অ্যান্টেনায় সর্বক্ষণ বিদ্যুৎ সংযোগের প্রয়োজন হবে, এবং সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে টেলিকম সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে দিয়েছে।
5G মোবাইল নেটওয়ার্কে চীনা সরঞ্জাম ব্যবহারের অনুমতি দেবে না ভারত সরকার
দীর্ঘদিন ধরে চলা ভারত-চীন সংঘাতের কথা আমাদের কারোরই অজানা নয় এবং ভারতের আসন্ন 5G সার্ভিসের উপরেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে বলে মনে করা যেতে পারে। কেননা কোছার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, 5G মোবাইল নেটওয়ার্কে চীনা উপকরণ ব্যবহারের অনুমতি দেবে না ভারত সরকার। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই সরকার একটি ট্রাস্টেড সোর্সেস পোর্টাল তৈরি করেছে, যেখানে সেই সমস্ত কোম্পানিগুলির নাম নথিভুক্ত রয়েছে যাদের তৈরি উপকরণ ভারতের 5G সার্ভিসের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং সেই তালিকায় কোনো চীনা কোম্পানির নাম নেই। সবশেষে কোছার এও জানিয়েছেন যে, পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক পরিষেবা চালু হলে গ্রাহকদের রিচার্জ প্ল্যানের খরচ খানিকটা বৃদ্ধি পাবে; তবে তা ঠিক কতটা পরিমাণে বাড়বে, সে সম্পর্কে এই মুহূর্তে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।