HomeAppsভোজপুরি গানে মজেছেন ইলন মাস্ক? 'ললিপপ লাগেলু' টুইট দেখেই বিস্মিত নেটিজেনরা

ভোজপুরি গানে মজেছেন ইলন মাস্ক? ‘ললিপপ লাগেলু’ টুইট দেখেই বিস্মিত নেটিজেনরা

শনিবার সকালে ইলন মাস্কের নামধারী একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে শাহরুখ খানের একটি বিখ্যাত সংলাপ টুইট করা হয়।

সম্প্রতি মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম Twitter কেনার পর Tesla-র সিইও ইলন মাস্ক (Elon Musk) এতে অনেক পরিবর্তন এনেছেন। সংস্থার ভোল বদলের চেষ্টায় গোটা বিশ্বের পাশাপাশি ভারতেও Twitter-এর প্রায় অর্ধেক কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এবং কোম্পানির বিদ্যমান কর্মীরাও এই মুহূর্তে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সবমিলিয়ে, চলতি সময়ে টেক দুনিয়ার যেদিকেই দুচোখ যাক না কেন, সর্বত্র Twitter সংক্রান্ত খবরই মানুষের চোখে পড়ছে। তবে সম্প্রতি এমন একটি ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এসেছে, যা দেখে অনেকেরই রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে। জানা গিয়েছে যে, ইদানিংকালে ইলন মাস্ক Twitter-এ খুব অ্যাক্টিভ রয়েছেন, এবং তিনি নাকি আজকাল হিন্দিতে টুইট করছেন!

আজ্ঞে হ্যাঁ, শুনে খুব অবাক লাগলেও এমন ঘটনা কিন্তু সত্যি সত্যিই ঘটেছে। শনিবার সকালে ইলন মাস্কের নামধারী একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে শাহরুখ খানের একটি বিখ্যাত সংলাপ টুইট করা হয়। টুইটটিতে বলিউড বাদশার কালজয়ী ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ সিনেমার সেই জনপ্রিয় সংলাপটিকে দেখা গিয়েছে – “বড়ে বড়ে দেশো মে অ্যায়সি ছোটি ছোটি বাতে হোতি রেহতি হ্যায়…হ্যায় না?” তবে এখানেই শেষ নয়, এরপর ইলন মাস্কের অ্যাকাউন্ট থেকে আর-একটি টুইট করা হয়, যাতে লেখা ছিল পবন সিং-এর সুপারহিট ভোজপুরি গানের একটি লাইন – “কামারিয়া কারে লাপালাপ, কী ললিপপ লাগেলু”। আচমকাই হঠাৎ টুইটারের নতুন কর্ণধারকে হিন্দিতে টুইট করতে দেখে রীতিমতো হতচকিত হয়ে গিয়েছেন হাজার হাজার টুইটার ব্যবহারকারী। তবে সত্যি সত্যিই কি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি নিজেই এই টুইটগুলি করছেন? আসুন বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

ইলন মাস্কের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে টুইটগুলি করা হয়নি

ইলন মাস্ক হিন্দিতে টুইট করছেন, এ খবর প্রকাশ্যে আসার পর টেক দুনিয়ায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গেলেও খোদ মাস্কের পক্ষে যে এই কাজ করা কোনোমতেই সম্ভব নয়, সেকথা প্রায় সকলেই আন্দাজ করতে পেরেছেন। এবং সত্যি সত্যিই ঘটনাটির খানাতল্লাশি করার পর দেখা গিয়েছে, যে অ্যাকাউন্ট থেকে টুইটগুলি করা হচ্ছে, সেটি মাস্কের ভেরিফায়েড অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট নয়। উল্লেখ্য, মাস্কের টুইটার ইউজারনেম @elonmusk; আর যে অ্যাকাউন্ট থেকে হিন্দিতে টুইটগুলি করা হচ্ছে, সেটির ইউজারনেম @iawoolford। অর্থাৎ, হিন্দিতে করা উপরিউক্ত টুইটগুলির পিছনে যে ইলন মাস্কের একেবারেই কোনো হাত নেই, সেকথা জলের মতো স্পষ্ট।

তবে ইলন মাস্কের নামে কে টুইট করছে?

এখন প্রশ্ন হল, হিন্দিতে টুইটগুলি যদি ইলন মাস্ক নাই করে থাকেন, তবে তার নাম ভাঙ্গিয়ে কে এই কাজ করছে? সেক্ষেত্রে বলি, যে অ্যাকাউন্ট থেকে হিন্দিতে টুইটগুলি করা হচ্ছে, তার ইউজারনেম থেকে জানা গিয়েছে যে, এই ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টটি ডঃ ইয়ান উলফোর্ডের (Dr. Ian Woolford), যিনি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দির অধ্যাপক। উলফোর্ড অতীতেও এই অ্যাকাউন্ট থেকে হিন্দি ভাষায় টুইট করেছেন, কিন্তু হালফিলে তিনি প্রোফাইল ফটো থেকে শুরু করে নাম ও কভার ফটো – সবকিছুই মাস্কের অ্যাকাউন্টের অনুরূপে পরিবর্তন করে নিয়েছেন, যার ফলে তিনি টুইট করলে লোকে মনে করছে যে ইলন মাস্কই হয়তো টুইট করছেন! অর্থাৎ সোজা কথায় বললে, এক আমআদমির টুইটার অ্যাকাউন্টের নাম বদলের জন্যই এই সকল গোলযোগের সূত্রপাত হয়েছে।

তাহলে কি যে কেউ ইলন মাস্কের নাম করে টুইট করতে পারে?

এখন নিশ্চয়ই আপনারা ভাবছেন যে, হিন্দির এই অধ্যাপক যখন মাস্কের অনুরূপে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টের ভোল পাল্টে ফেলেছেন, তখন চাইলে যে কেউ নিশ্চয়ই এই কাজ করতে পারে? সেক্ষেত্রে বলি, একটি ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্টের ইউজারনেম কখনও বদলানো যায় না। কারণ ইউজারনেম বদলে ফেললে অ্যাকাউন্টে প্রদর্শিত হওয়া ভেরিফিকেশন ব্লু টিকটি উধাও হয়ে যায়। তবে ইউজারনেম ছাড়া প্রোফাইল নেম, কভার ফটো, এমনকি প্রোফাইল ফটোও ইউজাররা নিজেদের ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করতে পারেন। ফলে আপনি যদি ইলন মাস্কের ফটো আপনার প্রোফাইলে লাগিয়ে দেন, তাহলে আপাতদৃষ্টিতে সেটিকে মাস্কের অ্যাকাউন্ট বলে মনে হলেও আসলে কিন্তু বিশেষ কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। কেননা কোনো টুইটার অ্যাকাউন্টের ইউজারনেম দেখেই সেটি আদতে যে ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট, তার আসল পরিচয় জেনে ফেলা সম্ভব; এবং সেই কারণেই ইউজারনেম কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যায় না। ফলে জনপ্রিয় কোনো ব্যক্তির নাম কিংবা ফটো নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা নিছক একটা ছেলেখেলা ছাড়া আর কিছুই নয়।

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, বর্তমানে ইউজারনেম ছাড়া নিজের Twitter অ্যাকাউন্টের বাকি সবকিছু হুবহু ইলন মাস্কের অ্যাকাউন্টের অনুরূপে পরিবর্তন করে একাধিক মিমস সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন ইয়ান। ফলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে, ইলন মাস্কের অ্যাকাউন্ট থেকেই টুইটগুলি করা হচ্ছে, যার জেরে অনায়াসে বেকুব বনে গিয়েছেন নেটিজেনরা। সবচেয়ে বড়ো কথা হল, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিন্দিতে টুইট করছেন – এরকম একটা চমকপ্রদ খবর প্রকাশ্যে আশায় টুইটগুলিকে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে, এবং মাস্কের করা টুইট ভেবে সেগুলিতে জোরদার কমেন্টও করছেন ইউজাররা। সবমিলিয়ে, হিন্দির এই অধ্যাপকের নিছকই একটা ছেলেমানুষির জেরে বর্তমানে টেক দুনিয়ায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular