গাড়ির হর্নে এবার বাজবে ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের সুমধুর আওয়াজ, নয়া আইন আনতে পারে কেন্দ্র

‘একালের সমস্যার সমাধান রয়েছে একালেই’ – সম্প্রতি নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে এমনই এক বার্তা দিলেন কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গডকরি। বিষয়টি হচ্ছে দিন দিন যেভাবে যানবাহনের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বাড়ছে তাতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি গাড়ির হর্নের আওয়াজে শব্দ দূষণও তালে তাল মিলিয়ে বেড়েই চলেছে। পরিবেশ দূষণ রুখতে যদিও দেশের সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন এবং একে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সেই ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের গাড়ি প্রস্তুতকারী একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে জোর দেওয়ার পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ির উৎপাদন বন্ধের বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করছে। কিন্তু এসব করে পরিবেশ দূষণের মাত্রা রোখা গেলেও শব্দ দূষণের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। তাই চলন্ত গাড়ির হর্নের আওয়াজ শ্রুতিমধুর করতে এবং শব্দ দূষণ কমাতে এবার নতুন পথের দিশা দেখালেন নীতিন গডকরি।

এ বিষয়ে গডকরি বলেছেন তিনি দেশের বাজার চলতি গাড়ির হর্নের আওয়াজের বদলে তা ভারতীয় কোনো বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজে রূপান্তরের কথা ভাবছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, গতকাল তিনি নাসিকের একটি হাইওয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়ে এ কথা জানিয়েছেন। বর্তমানে শহরগুলিতে তো বটেই এমনকি গ্রামেও চলন্ত গাড়ির হর্নের আওয়াজ থেকে হওয়া শব্দ দূষণ ভীষণই চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় হর্নের আওয়াজের কুপ্রভাব মানুষের ও প্রাণীদের মধ্যেও ইদানিং লক্ষ্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গাড়ির হর্নের পরিবর্তনের বিষয়টি উল্লেখের পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স এবং পুলিশের গাড়ির সাইরেনের আওয়াজের পরিবর্তনের চিন্তাভাবনার কথা জানিয়েছেন। তিনি দেশের অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ির সাইরেনের আওয়াজ আরো মধুর করার কথাও বলেছেন। এ বিষয়ে তার উক্তি, “এখন আমি চাই এইসব সাইরেনও বন্ধ হোক। এখন আমি অ্যাম্বুলেন্স এবং পুলিশের গাড়িতে ব্যবহৃত সাইরেনগুলির খুঁটিনাটি বিষয়গুলি নিয়ে চর্চা করছি।”

গডকরির কথায়, “একজন শিল্পী আকাশবাণী-র সুর কম্পোজ করেছিলেন যেটা ভোরবেলায় বাজানো হতো। আমি ভাবছি সেই সুরটি অ্যাম্বুলেন্সে ব্যবহার করতে চাইছি, যাতে পথচলতি মানুষ এটি উপভোগ করতে পারেন। এটি শুনতে ভীষণই বিরক্তিকর যখন কোনো মন্ত্রীর গাড়ি উচ্চস্বরে সাইরেন বাজিয়ে পাশ দিয়ে যায়। এটি কানের ক্ষতি করে।” যে আওয়াজ আমাদের কানকে খানিকটা আরাম দিতে পারবে এমন বেশ কয়েকটি বাদ্যযন্ত্রের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন গডকরি। সেই তালিকায় রয়েছে বাঁশি, তবলা, ভায়োলিন, মাউথ অর্গান এবং হারমোনিয়াম। খুব শীঘ্রই এ সম্পর্কিত একটি আইন আনার বিষয়ে তিনি পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গাড়ির হর্নের উপর করা বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে জানা গেছে শহরের পাশাপাশি দেশের গ্রামগুলিতেও শব্দ দূষণের এক অন্যতম কারণ এটি। সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড বা (CPCB) এর তথ্য অনুযায়ী দেশের মেট্রোপলিটন সিটিগুলি যেমন চেন্নাই, দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই এবং হায়দ্রাবাদের মত শহরগুলিকে গাড়ির হর্নের আওয়াজ মাত্রাতিরিক্ত কোলাহলপূর্ণ করে তুলেছে। যদিও ইতিমধ্যেই সরকারের তরফে রেসিডেন্সিয়াল এলাকায় শব্দের তীব্রতা দিনে ৫৫ ডেসিবেল ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল রাখার প্রস্তাব আনা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের এই বিধি কতটা পালন করা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন