সার্ভিস সেন্টারে একগাদা খরচ বেঁচে যাবে, এই কাজগুলি করলেই গাড়ি থাকবে সম্পূর্ণ ফিট

একথা সত্যি যে শখের গাড়িটিকে যত্নে রাখার জন্য বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়। সাধারণভাবে গাড়ি চালানোর মজা যতটাই তার ঠিক অপর প্রান্তে একে পরিচর্যা করার প্রয়োজন ততটাই। নিয়মিতভাবে আপনার গাড়ির যত্নআত্তি করলে পারফরম্যান্স উন্নত হওয়ার পাশাপাশি বহু টাকা খরচ করে রিপেয়ার করার প্রয়োজন অনেকটাই কমে আসে। সেই কারণেই ব্যস্ততার ফাঁকে আপনার এই চার চাকার বাহনটির সামান্য কিছু নিত্যনৈমিত্তিক রক্ষণাবেক্ষণ কিভাবে করা উচিত সেই সংক্রান্ত কিছু টিপস রইল আজকের এই প্রতিবেদনে।

গাড়ির বড়সড় রিপেয়ার খরচ বাঁচাতে নিয়মমাফিক পরিচর্যার কিছু পদক্ষেপ-

গাড়িতে ব্যবহৃত তেলের পরিবর্তন

একটি গাড়ির মধ্যে ইঞ্জিন থেকে শুরু করে ব্রেক, ক্লাচ, লিভার এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই থাকে তৈলাক্ত পদার্থ। আসলে এগুলির কার্যকারিতা নিয়মিত বজায় রাখতেই এই বন্দোবস্ত। একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করার পর অবশ্যই বদলে ফেলুন গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল। এক্ষেত্রে মোটামুটি ভাবে ৮,০০০ কিলোমিটার পর একবার ইঞ্জিন অয়েল বদল করা যেতে পারে। তবে এ সংক্রান্ত তথ্য বিশদে দেখতে হলে অবশ্যই চোখ রাখুন গাড়ির ম্যানুয়াল বইতে। এছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন অংশে ব্যবহৃত এই তৈলক্ত পদার্থগুলি সময় মত বদলাতে পারলে এগুলির আয়ু বাড়বে নিঃসন্দেহে। তাছাড়াও গাড়ির রেডিয়েটরে ব্যবহৃত ক্যুলান্ট নির্দিষ্ট সময় অন্তর অবশ্যই বদলাতে হবে।

ব্যাটারি পরিষ্কার রাখা

গাড়ির মধ্যে ব্যবহৃত ব্যাটারিতে নিয়মিত চার্জ গ্রহণ ও বর্জন করার ফলে এর দুটি টার্মিনালে সালফার জমতে দেখা যায়। এর ফলে এই চার্জের আদান-প্রদান এর কাজ ব্যাহত হতে থাকে। এমনকি দীর্ঘদিন এমন চলতে থাকলে ব্যাটারির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। সেই জন্য অবশ্যই ব্যাটারির এই টার্মিনাল পয়েন্টগুলি পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি বছরে অন্তত দুইবার ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান দক্ষ মেকানিক দিয়ে।

কেবিন এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন

গাড়ির কেবিনের মধ্যে লাগানো বাতানুকূল যন্ত্রের এয়ার ফিল্টারটি প্রতিমুহূর্তে কেবিনের ভেতরে থাকা বাতাস থেকে বাইরের ধূলিকণাকে বাছাই করতে সাহায্য করে। এই কাজের জন্যই এয়ার ফিল্টারের গায়ে জমতে থাকে ধূলিকণার আস্তরণ। দীর্ঘদিন ধরে এয়ার ফিল্টার পরিষ্কার না করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই গাড়ির এসি এর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এর ফলেই কেবিনের ভিতরের অংশে ঠান্ডা হওয়ার প্রবণতা কমতে থাকে। তাই এসিতে বড়সড়ো কোন ক্ষতি হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই বছরে অন্তত একবার বদলে ফেলুন এই এয়ার ফিল্টার।

উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার পরিবর্তন

গাড়ি চালানোর সময় উইন্ডশিল্ডের কাঁচ পরিষ্কার ঝকঝকে রাখতে ওয়াইপার এর অবদান অনস্বীকার্য। বৃষ্টির সময় হোক কিংবা কুয়াশাতে এই উইন্ডোশিল্ডটি পরিষ্কার থাকলে অবশ্যই সঠিকভাবে গাড়ি চালানো সম্ভবপর হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে এই ওয়াইপারগুলির গায়ে লাগানো রবারের অংশগুলি নষ্ট হতে থাকে। আর তখনই এর কার্যকারিতা প্রায় শেষ বলেই ধরে নেওয়া যায়। নষ্ট হয়ে যাওয়া ওয়াইপার ব্যবহার করতে গেলে এই কাঁচের উপর চিরস্থায়ীভাবে দাগ পড়ার সম্ভাবনাও প্রবল। তাই সময় থাকতেই বদলে ফেলুন এগুলি।

সমস্ত আলোর কার্যকারিতা যাচাই করা

চারচাকা মডেল এ সুরক্ষা ব্যবস্থার একদম প্রাথমিক স্তরে রয়েছে এর লাইটিং সিস্টেম। বিশেষত অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে সুরক্ষিতভাবে গাড়ি নিয়ে চলতে হলে এর সবকটি আলোর কাজ ঠিকঠাক হওয়া একান্ত প্রয়োজন। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে এই আলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখুন যাতে হেডলাইট, টেললাইট, ইন্ডিকেটর, পার্কিং লাইট এগুলির মধ্যে কোনো একটি আলো খারাপ হলে যাতে তা তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন করা যায়।

টায়ারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা

রাস্তার সঙ্গে আঁকড়ে ধরে একটি গাড়িকে এগিয়ে চলার জন্য একমাত্র সাহায্য করে এর চারটি চাকার সঙ্গে লাগানোর টায়ার। গাড়ির ম্যানুয়াল বইতে লেখা নির্দিষ্ট এয়ার প্রেসার সবসময় গাড়ির টায়ারে রাখার চেষ্টা করুন। এর ফলে মাইলেজ যেমন বাড়বে তেমনই উন্নত হবে পারফরমেন্স।

ব্রেকপ্যাডের পরিবর্তন

গতিরোধ করার জন্য ব্রেকের ভূমিকা কতটা তা আজ নতুন করে বলার অবকাশ নেই। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্রেক আদতে আমাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। যদি কোনো সময় গাড়ির ব্রেকের থেকে কোন অদ্ভুত ধরনের শব্দ শুনতে পান তবে অবশ্যই এটি ব্রেক প্যাড পাল্টানোর ইঙ্গিত বহন করে। এমন পরিস্থিতি হলে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে অতি শীঘ্রই বদলে ফেলুন নষ্ট হওয়া ব্রেকপ্যাড। নয়তো দুর্ঘটনা হওয়ার মতো পরিস্থিতি ঘটতে পারে যে কোন মুহূর্তে।

টায়ারের অদল বদল ঘটানো

ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গাড়িগুলিতে থাকে চারটি টায়ার। আর মজার বিষয় হল এই চারটি টায়ারের কিন্তু সবকটির উপর একই রকম চাপ অনুভূত হয় না। সেই কারণেই কয়েক মাস বাদে বাদে এই টায়ারগুলি একটি অন্যটির সঙ্গে অদল বদল করে দেওয়া প্রয়োজন। এর ফলে টায়ারের সামগ্রিক আয়ু বাড়ে অনেকটাই। বলা হয় প্রতি ৮,০০০ কিমি পর পর এই কাজ করা উচিত।

সাসপেনশনের যত্ন নেওয়া

গাড়ির সাসপেনশনের বিষয়টি আমরা অনেক সময় চোখের আড়াল করলেও এটি কিন্তু আরামদায়ক যাত্রা পথের অন্যতম বড় কারণ। গাড়ির চারটি সাসপেনশন সঠিকভাবে কাজ করলে তা অবশ্যই প্রতিটি যাত্রীকে এক আলাদা সুখানুভূতি প্রদান করে। এইজন্য অবশ্যই গাড়ির সাসপেনশনের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিন।