Facebook থেকে আসক্তি কাটাতে থাপ্পড় মারার চাকরি, বেতন ঘন্টায় ৬০০ টাকা

বর্তমান ডিজিটাল যুগে হাতেকলমে লেখালেখি করে কাজ প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে, এখন বেশিরভাগ সংস্থাতেই কাজের জন্য ব্যবহৃত হয় ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার। আর একটানা কম্পিউটারে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে একটু বিনোদনের জন্য মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির (Facebook, Twitter, Instagram) হাত ধরতেই পছন্দ করে। তবে একবার এই জাতীয় প্ল্যাটফর্মে ঢুকে পড়লে সেখান থেকে যেন আর বেরিয়ে আসতে মন চায় না। ফলে কাজে ব্যাঘাত ঘটে, আর ফলস্বরূপ ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জোটে তিরস্কার। সেই কারণেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির মোহমায়া এড়িয়ে কাজে মন দেওয়ার এক আজব উপায় বের করেছেন এক প্রবাসী ভারতীয় ব্যবসায়ী।

প্রবাসী এই ভারতীয় ব্যবসায়ী হলেন ওয়্যারেবেল ডিভাইস ব্র্যান্ড পাভলোক (Pavlok)-এর প্রতিষ্ঠাতা মনীশ শেঠি (Maneesh Sethi)। পরিচয় শুনেই নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে যে তিনি ভীষণ ব্যস্ত মানুষ। তবে কাজের জন্য তিনি ল্যাপটপে ইন্টারনেট খুললেই অভ্যাসবশত ফেসবুক খুলে ফেলেন। তারপর খুব স্বাভাবিকভাবেই ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রোল করতে করতে অনেকটা সময় নষ্ট করেন। আর তাই তিনি কাজের সময়ে ফেসবুক খুললেই তাঁকে চড় মারার জন্য এক মহিলাকে নিয়োগ করেছেন!

আজ্ঞে হ্যাঁ! ২০১২ সালে মার্কিন শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপনের ওয়েবসাইট Craigslist-এ চড় মারার চাকরির জন্য আবেদন চেয়ে মনীশ শেঠি একটি বিজ্ঞাপন দেন। তিনি বিজ্ঞাপনটিতে লিখেছিলেন, “যখন আমি অযথা কাজের সময় নষ্ট করব, তখন আপনাকে আমার উপর চিৎকার করতে হবে অথবা প্রয়োজন হলে আমাকে চড় মারবেন।” স্ল্যাপার নিয়োগের এই বিজ্ঞাপনটি দেখে আবেদন করে চাকরিটি পান কারা (Kara) নামের এক মহিলা।

চাকরির শর্ত অনুযায়ী, মনীশ যখন ল্যাপটপে কাজ করেন, তাঁর পাশে বসে থাকতে হয় কারাকে। আর তাঁর তীক্ষ্ণ নজর থাকে মনীশের কম্পিউটার স্ক্রিনে। কাজের ফাঁকে কোনো সময়ে ফেসবুক খুললেই মনীশকে রীতিমতো জোড়ে চড় মারেন কারা। এর জন্য ঘণ্টায় ৮ ডলার করে বেতনও পান তিনি, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৬০০ টাকার কাছাকাছি। যদিও মার্কিন মুলুকের হিসেবে এটা বেশ কম অঙ্কের বেতন, তবে কম হলেও শুধু চড় মেরেই যদি টাকা পাওয়া যায়, তাহলে এরকম চাকরি করতে আপত্তি কীসের!

কারার এই কাজে কিন্তু ভীষণভাবে খুশি পাভলোকের প্রতিষ্ঠাতা। মনীশ জানিয়েছেন, কারার কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। এই নয়া পন্থায় তাঁর এখন বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট হয় না। চড় খাওয়ার ভয়ে তিনি মন দিয়ে কাজ করতে থাকেন, কারণ তা না করলেই যে মিলবে চাঁটি! তিনি তাঁর ব্লগে আরও জানিয়েছেন যে, কাজের ফাঁকে ফেসবুক করলে দিনে তাঁর প্রোডাক্টিভিটি ছিল ৩৫-৪০%, কিন্তু এখন কারা পাশে এসে বসায় তাঁর কাজের প্রোডাক্টিভিটি একধাক্কায় ৯৮% পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

ভালোভাবে কাজ করার জন্য শেঠির এই নয়া পন্থাটি ২০১২ সালে চতুর্দিকে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল, এবং এমন আজব কান্ডে বেশ মজা পেয়েছিলেন নেটিজেনরা। কিন্তু নয় বছর আগের কথা আজ হঠাৎ কেন বলছি? আসলে এই মজাদার কান্ডটি সম্প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে স্বয়ং Tesla ও SpaceX-এর কর্ণধার, বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি এলন মাস্কের। দুটি ‘ফায়ার’ ইমোজি দিয়ে এই কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন তিনি। এই প্রতিবেদনটি পড়ে আপনিও এখন কাজে মনোনিবেশ করতে এমন পন্থা অবলম্বন করার কথা ভেবে দেখতে পারেন কিন্তু!