মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা: ফের দাম বাড়তে পারে প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানের, আয় বাড়াতে তৎপর ৩টি প্রধান প্রাইভেট টেলকো

বর্তমানে চরম মূল্যবৃদ্ধির যুগে দিন গুজরান করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হয়েছে। একে তো সর্বত্র বাজারদর আগুন, তার ওপর লাগাতার প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ায় কোন দিকটা বাদ দিয়ে কোন দিকটা সামাল দেওয়া যায় – সেই চিন্তায় এখন অধিকাংশ মানুষেরই ঘুম উড়ে গিয়েছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, চলতি সময়ে রোজকার ব্যবহৃত জিনিসগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হল মোবাইল রিচার্জ প্ল্যান যেটি ছাড়া এখন এক মুহুর্ত চলাও এককথায় অসম্ভব বললেই চলে। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় তিনটি বেসরকারি কোম্পানি (Reliance Jio, Airtel, এবং Vodafone Idea বা Vi) তাদের প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানগুলির দাম ২০%-২৫% পর্যন্ত বাড়িয়ে ইতিমধ্যেই আমজনতার পকেটে বেশ ভালোরকমের চাপ সৃষ্টি করেছে। আর এবার সেই চাপের পরিমাণ আরও বেশ খানিকটা বাড়তে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয়ার্ধে আরও একবার ট্যারিফ প্ল্যানের দাম বাড়াতে চলেছে দেশের প্রথম সারির তিন টেলিকম সংস্থা।

কি, শুনে আপনার মাথায় বাজ পরলো নাকি? তাহলে আপনি একা নন, সম্প্রতি এই খবরে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে দেশের আমজনতা। জানা গিয়েছে যে, প্রায় ১০-১২ শতাংশ পর্যন্ত প্রিপেইড প্ল্যানের দাম বাড়াতে পারে টেলিকম সংস্থাগুলি। তবে সাধারণ মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লেও টেলিকম কোম্পানিগুলি দাম বাড়াতে একপ্রকার বাধ্যই হচ্ছে বলে দেশীয় রেটিং এজেন্সি ক্রিসিল (CRISIL)-এর এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূলত গ্রাহক পিছু গড় আয় বা এআরপিইউ (ARPU) বৃদ্ধির লক্ষ্যেই গত বছর অপারেটররা প্রিপেইড রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়ায়। কিন্তু এরপর আয় খানিকটা বাড়লেও উন্নত পরিষেবা প্রদানের পক্ষে তা যথেষ্ট নয় বলে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবারও তারা প্রিপেইড পরিষেবার দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রিপোর্টে একথাও বলা হয়েছে যে, ইউজারদেরকে যথাযথ পরিষেবা দিতে গেলে রিচার্জ প্ল্যানের দাম বাড়ানো একান্ত আবশ্যক। কারণ টেলিকম সংস্থাগুলি জানিয়েছে যে, শিল্পের জন্য নেটওয়ার্ক এবং স্পেকট্রামে বিনিয়োগ করতে হলে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর এআরপিইউ বাড়াতেই হবে, তা না হলে যথাযথ পরিষেবা দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তাই এ বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালে অন্ততপক্ষে ৫ শতাংশ এআরপিইউ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সংস্থাগুলি। এর ফলে চলতি অর্থবর্ষে তিনটি শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির আয় ২০-২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এখানেই শেষ নয়, রিপোর্টে একথাও বলা হয়েছে যে, ২০২৩ সালে এআরপিইউ ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের পক্ষে রীতিমতো এক ভয়ঙ্কর চিন্তার বিষয়।

সবমিলিয়ে অন্যান্য সব জিনিসের পাশাপাশি লাগাতার রিচার্জ প্ল্যানের দাম বৃদ্ধিতে বেহাল দশা হয়েছে আমজনতার। কিন্তু চলতি সময়ে এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার হাত ছেড়ে থাকা কার্যত অসম্ভব বললেই চলে। তাই কোন কোম্পানি একটু সস্তায় সুবিধা দিচ্ছে, তার সন্ধানে এখন প্রায় প্রতিটি অপারেটরেরই দ্বারস্থ হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। তাই কোনো সময় গ্রাহকসংখ্যা কমা তো আবার কোনো সময় বাড়া – এখন টেলিকম ইন্ডাস্ট্রির ইউজারবেস গ্রাফে রোজই এই ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন যে, এই দাম বাড়ানো সাময়িকভাবে টেলিকম সংস্থাগুলিকে তৃপ্তি দিলেও পরবর্তীকালে তারা আরও বেশি এআরপিইউ হাসিলের জন্য চেষ্টা চালাবে। আর CRISIL-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। ফলে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আগামী দিনে উপভোক্তারা রিচার্জ প্ল্যানের আরও একাধিক মূল্যবৃদ্ধির সাক্ষী হতে পারেন।