বড় খবর: ভারতে কম মূল্যের ফিচার ফোনের বিক্রি বন্ধ করতে চলেছে Samsung

স্যামসাং (Samsung), ভারতে, ‘হাই ভলিউম’ তথা কম মূল্যের ফিচার ফোনের ব্যবসা থেকে ধীরে ধীরে প্রস্থান করার পরিকল্পনা করছে বলে সম্প্রতি খবর পাওয়া গেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের জন্য ‘লো ভ্যালু’ প্রাইজ ট্যাগ সহিত আসা ফিচার ফোনের শেষ ব্যাচটি আগামী ডিসেম্বর মাসে কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং পার্টনার ডিক্সন (Dixon) দ্বারা ডেভলপ হয়েছে। কারণস্বরূপ মনে করা হচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক টেক জায়ান্টটি হয়তো হাই প্রাইজ রেঞ্জের ডিভাইস উৎপাদনের উপর অধিক মনোনিবেশ করতে চাইছে। আর তাই সস্তার ফিচার মোবাইল নির্মাণ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্যামসাং। এই বিষয়ে, প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের একজন বলেছেন যে, “স্যামসাং আগামী সময়ে ১৫,০০০ টাকার বেশি দামের স্মার্টফোন লঞ্চ করার উপরই বেশি জোর দেবে।”

ভারতে কম মূল্যের ফিচার ফোনের ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলো Samsung

ভারত সরকারের প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইন্সেন্টিভ (PLI) স্কিমের সাথে সংযুক্ত দুটি প্রধান বহুজাতিক কন্ট্রিবিউটর বা অবদানকারীর মধ্যে একটি হল দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক ব্র্যান্ড স্যামসাং। উক্ত স্কিমের অধীনে, স্থানীয় ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে উক্ত সংস্থাটি যদি ১৫,০০০ টাকার অধিক ফ্যাক্টরি মূল্যের সাথে হ্যান্ডসেট তৈরী করে তবেই শুধুমাত্র বিশেষ সহায়তা আয়ত্ত করতে পারবে। এরূপ নিয়মাবলীর দরুনই সম্ভবত, কম মূল্যের ফিচার ফোনের ‘ম্যানুফ্যাকচারিং’ স্থগিত করার পদক্ষেপ নিয়েছে স্যামসাং।

স্যামসাং সংস্থার সাথে নিবিড় ভাবে জড়িত এক ব্যক্তি জানিয়েছেন যে, “স্যামসাং সম্প্রতি চ্যানেল পার্টনারদের সাথে কথা বলেছে এবং কথোপকথন চলাকালীন আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই বা এই বছরের শেষ নাগাদ ভারতের ফিচার ফোন ব্যবসা থেকে বেরিয়ে আসবে এমনটা উল্লেখ করেছিল।” যদিও স্যামসাং বা ডিক্সন কারোর পক্ষ থেকেই এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য শোনা যায়নি।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে ভারতে ফিচার ফোনের শিপমেন্ট ‘ইয়ার-অন-ইয়ার’ (YoY) গ্রোথের নিরিখে ৩৯% হ্রাস পেয়েছে। মার্কেট রিসার্চার ফার্ম কাউন্টারপয়েন্টের (Counterpoint) একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে, সরবরাহে ব্যাঘাত, উচ্চ ইনভেন্টরি লেভেল এবং রিটেল মুদ্রাস্ফীতির জন্য চাহিদা কমার কারণে YoY গ্রাফ-চার্টে এরূপ পতন দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, বিগত কয়েক বছর যাবৎ ফিচার ফোন সেগমেন্টে শীর্ষ-স্থানে অবস্থানকারী স্যামসাংয়ের মার্কেট শেয়ার গত মার্চ মাসে হ্রাস পেয়ে ১২% হয়ে গেছে। যার দরুন দক্ষিন কোরিয়ার টেক জায়ান্টটি এখন তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে, কাউন্টারপয়েন্টের ডেটা অনুসারে, আইটেল (Itel) বর্তমানে ২১% মার্কেট শেয়ারের সাথে প্রথম স্থানের অধিকারী এবং ২০% মার্কেট শেয়ার নিয়ে ভারতের হোম-ব্রিড ব্র্যান্ড লাভা (Lava) দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের শিপমেন্টের ক্ষেত্রে স্যামসাং, বেসিক বা ফিচার ফোন সেগমেন্টে ‘ভ্যালু’ অনুসারে ১% এবং ‘ভলিউম’ এর নিরিখে মাত্র ২০% অবদান রেখেছিল বলে দাবি করেছে কাউন্টারপয়েন্ট। আর এই রূপ নিম্নগামী গ্রাফের কারণে স্যামসাং সম্ভবত ফিচার ফোনের ব্যবসা থেকে প্রস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলস্বরূপ, স্যামসাংয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা, যথা – লাভা (Lava), এইচএমডি গ্লোবাল অধীনস্ত নোকিয়া (Nokia) এবং ট্রান্সশন হোল্ডিংয়ের সাব-ব্র্যান্ড আইটেল (Itel) -এর সামনে ভারতের ফিচার ফোনের বাজার অনেকাংশে উন্মুক্ত হয়ে যাবে।

যাইহোক, স্যামসাং বর্তমানে হাই-রেঞ্জ স্মার্টফোন সেগমেন্টের শীর্ষস্থানটি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছে। এই ব্যাপারে, সংস্থার এক্সিকিউটিভরা জানিয়েছেন যে, জুনের শেষে অর্থাৎ দ্বিতীয় কোয়ার্টারে স্যামসাংয়ের মার্কেট শেয়ার দ্বিগুণ অঙ্কে বৃদ্ধি পাবে বলে তারা আশা করছে। গত মার্চ মাসে কাউন্টারপয়েন্ট দ্বারা পরিচালিত একটি সার্ভে অনুসারে, ১৫,০০০ টাকার অধিক মূল্যের সাথে আসা ৫জি (5G) হ্যান্ডসেট বিভাগে, প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা শাওমি (Xiaomi)-কে স্থানচ্যুত এবং ২২% মার্কেট শেয়ার লাভ করার মাধ্যমে শীর্ষে উঠে আসে স্যামসাং। শুধু তাই নয়, সংস্থাটি পরপর দুই ত্রৈমাসিকে ভারতে সর্বাধিক বিক্রিত ৫জি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হিসেবে উঠে এসেছে বলে মার্কেট রিসার্চার সংস্থাটি জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, মার্কেট বিশ্লেষকরা বলছেন যে, হ্যান্ডসেটের স্থানীয় উত্পাদনের জন্য ভারত সরকার দ্বারা আনীত PLI স্কিম, স্যামসাংয়ের সিদ্ধান্ত অনেকখানি প্রভাবিত করেছে। কেননা এই স্কিমের অধীনে, বহুজাতিক ব্র্যান্ডগুলিকে নানাবিধ সুবিধা পাওয়ার জন্য ১৫,০০০ টাকা বা তার অধিক মূল্যের (ফ্যাক্টরি মূল্য) ফোন তৈরি করতে বাধ্য করা হয়। যেখানে কিনা দেশীয় ব্র্যান্ডগুলি সস্তা ফোন তৈরি করার জন্য প্রণোদনা পেয়ে থাকে। ফলস্বরূপ, স্যামসাং তাদের বাজেট ফোন উত্পাদনের ‘কন্ট্রাক্ট’ স্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারিং সংস্থা ডিক্সনকে দিয়েছিল। এছাড়াও, স্মার্টফোনের তুলনায় ফিচার ফোনের চাহিদা কম হওয়ায়, স্যামসাংয়ের জন্য ভারতে ফিচার ফোনের বিক্রি বন্ধ করে এবং বিদেশে রপ্তানির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া অধিক লাভজনক হবে বলে মনে করছেন কিছু মার্কেট বিশেষজ্ঞ।