চোরের ক্যারিশমা! আসল iPhone XS পকেটে ঢুকিয়ে রেখে গেল নকল মডেল, তারপর?

আসল সরিয়ে নকল iPhone গছিয়ে দিয়ে গেল চোর, প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকার খোয়ালেন ভিক্টিম

আইফোন চুরি এবং হ্যাকিংয়ের মতো ঘটনা সাম্প্রতিক সময় আকছার ঘটছে। গত মাসেই ম্যানহাটন নিবাসী রেহান আয়াস (Reyhan Ayas) নামে এক মহিলা উইকেন্ড উদযাপন করতে একটি ক্লাবে গিয়ে আইফোন ছিনতাইবাজের পাল্লায় পরে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খুইয়েছিলেন৷ আর এক মাস যেতে না যেতেই, আবারো প্রায় অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটলো ম্যানহাটনেই। তবে এবারে অপহর্তা একদম ব্যতিক্রমী ও আশ্চর্যজনক উপায়ে আইফোন চুরি করেছে। ব্যতিক্রমী বলার কারণ, এবার ভিক্টিমের হাত থেকে আইফোন ছিনতাই করা হয়নি, না চুপিসারে ডিভাইসটিকে পকেটস্থ করেছে চোর। বরং এই চুরির ঘটনায়, আসল আইফোনকে সরিয়ে দিয়ে একটি নকল মডেল রেখে দিয়ে ভিক্টিমকে রীতিমতো বিভ্রান্ত করে দিয়েছে অপহর্তা। আর যতক্ষনে ব্যক্তিটি জানতে পারেন তার ফোনটি নকল, ততক্ষনে ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা সরিয়ে ফেলা হয়।

আসল সরিয়ে নকল iPhone গছিয়ে দিয়ে গেল চোর, প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকার খোয়ালেন ভিক্টিম

জানা গেছে ট্রেন্ট (Trent) নামক এক ব্যক্তি তার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ম্যানহাটনের একটি বারে পার্টি করতে যান। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া কালীন ব্যক্তিটি তার iPhone XS মডেলটিকে কয়েক মিনিটের জন্য টেবিলে রেখে গিয়েছিলেন। আর এই কিছুক্ষনের জন্য আইফোনটি নজরের বাইরে রাখার কারণেই ঘটে বিপত্তি। চোর ভিক্টিমের অন্যমনস্কতার ফায়দা তুলে, আসল আইফোন এক্সএস -কে পকেটে ঢুকিয়ে নকল ডামি মডেল রেখে দেয়। কিছু সময় পর ট্রেন্ট তার টেবিলে ফিরে এসে ফোনটি আনলক করতে গিয়ে দেখেন যে তা চালু হচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই তিনি ভেবেছিলেন ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়ার জন্য ফোন অন হচ্ছে না। কিন্তু শীঘ্রই তার এই ভুল ভাঙে, যখন তিনি একটি পিৎজা শপে যান ফোন চার্জ করাতে।

ট্রেন্ট জানান, একটি পিৎজা শপে খাবারের অর্ডার দেওয়ার সময় ফোন চার্জ করতে পারেন কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন কর্মীদের। এর পর ডিভাইসটিকে যখন চার্জে বসান তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে এতক্ষন ধরে যে ফোনকে নিজের ভেবে হাতে নিয়ে ঘুরছিলেন, সেটি আসলে তার নয়। প্রথমটায় ট্রেন্ট ভেবেছিলেন যে – পিৎজা শপের কর্মীরা তার আইফোন অদলবদল করেছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলে – “তারা জায়গাটির সাথে যথেষ্ট পরিচিত এবং শপের মালিক এমন কিছু করবে না” বলে জানায়। আর এরপরই শুরু হয় আসল তদন্ত। যারপর ভিক্টিমের আইফোন এক্সএস চুরি যাওয়ার আসল কাহিনী প্রকাশ্যে আসে।

ট্রেন্ট একটি সাধারণ চুরির ঘটনা ভেবে তার iPhone XS চুরি যাওয়া রিপোর্ট দায়ের করে পুলিশে কাছে। কিন্তু তিনি ঘুনাক্ষরেও টের পাননি যে, ম্যানহাটনের বারে থাকাকালীনই তার উপর নজর রেখেছিল অপহর্তা, যাতে সে পাসকোড এন্টার করলেই জেনে যেতে পারে। আর যেমন ভাবা তেমন কাজ, পাসকোড দেখে নেওয়ার পরেই আসল আইফোন সরিয়ে দেওয়া হয়। আর পরবর্তীতে চোর ডিভাইসে পাসকোড দিয়ে লগ-ইন করে এবং অ্যাপল আইডির পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দেয়। পাশাপাশি ফোন আনলক করে, ভিক্টিমের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য, ফিনান্সিয়াল অ্যাপে লগ-ইন করার পাসওয়ার্ড, অ্যাপল আইডি বা আইক্লাউডে (iCloud) -এ থাকা ডকুমেন্ট সহ যাবতীয় ডেটার অ্যাক্সেস নিয়ে নেয় চোর।

পুলিশ প্রদত্ত রিপোর্ট অনুসারে, iPhone XS ফোনের পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের অ্যাক্সেস পাওয়ার পর চোর ১,৬৩৩ ডলার (ভারতীয় মূল্যে প্রায় ১,৩৫,০০০ টাকা) মূল্যের একটি আইপ্যাড কেনে এবং ট্রেন্টের ভেনমো (Venmo) অ্যাকাউন্ট থেকে ২২৯.৬৮ ডলার (প্রায় ১৯,০০০ টাকা) সরিয়ে দেয়। এরপর চোরটি নিউইয়র্কের কয়েকটি স্টোর থেকে বারবার আইপ্যাড কেনার চেষ্টা করে এবং পুনরায় ৯৮০ ডলার (প্রায় ৮০,৮০০ টাকা) উইথড্র করার চেষ্টা করে।

যেহেতু অপহর্তা আইফোনটি চুরি করার পর পরই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দেয়, সেহেতু ট্রেন্ট তার অ্যাপল অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হননি। যারপর ভিক্টিম তৎক্ষণাৎ অ্যাপল স্টোরে যান এবং ডিভাইসের পাসকোড বা পাসওয়ার্ড রি-সেট করার আবেদন জানান। স্টোরের তরফ থেকে জানানো হয় যে – যেহেতু দুর্বৃত্ত ইতিমধ্যেই একবার পাসওয়ার্ড রিসেট করার রিকোয়েস্ট করেছিল, সেহেতু আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা যাবে না। কেননা অ্যাপল ইকোসিস্টেম স্বয়ংক্রিয় ভাবে রিফ্রেশ হয় এবং প্রতি ২৪ ঘণ্টায় মাত্র একটি রিকোয়েস্ট অনুমোদন করে। অ্যাপল স্টোর থেকে আরো জানানো হয় যে, “ট্রেন্ট যদি পরের দিনই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন না করতেন, তবে তাকে দীর্ঘ ২৭ দিন অপেক্ষা করতে হত।”

এই বিষয়ে ট্রেন্টের জানাষ, “অ্যাপল স্টোরের সার্ভিস তাকে হতাশ করেছে।” কেননা ব্যক্তিটি তার সমস্ত আইডি এবং নথি প্রদান করার পরও তার কথা বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেছিল তারা। যাইহোক, দু’সপ্তাহ পর ট্রেন্ট অবশেষে তার অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস ফিরে পাওয়ার পর পাসপোর্ট এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ সমস্ত ডকুমেন্ট তাকে পরিবর্তন করতে হয়েছিল। কেননা চোরের কাছে ইতিমধ্যেই এইসকল ডকুমেন্টের কপি মজুত থাকায়, সেগুলির অপব্যবহার করা হতে পারে বলে সন্দেহ করেছে ট্রেন্ট৷