প্রতারকদের নতুন ফাঁদ, অশ্লীল ভিডিও দেখার সময় আইনবিরুদ্ধ কাজ বলে চাওয়া হচ্ছে টাকা, সতর্ক হন

সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে তাদের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই যে অনলাইন স্ক্যামাররা একের পর এক নিত্যনতুন ফন্দিফিকির অবলম্বন করে চলেছে, সেকথা আমাদের কারোরই অজানা নয়। সম্প্রতি তারা টার্গেট করেছে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের যারা ইন্টারনেটে “অশ্লীল” দেখে থাকে। ইন্টারনেটে যখন ইউজাররা অশ্লীল দেখছেন, তখন তাদের স্ক্রিনে একটি পপ-আপ ভেসে উঠছে যাতে লেখা থাকছে যে, অশ্লীল ভিডিও দেখার দরুন সেই “ব্রাউজারটিকে লক করা হয়েছে” এবং সেটিকে আনলক করার জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হচ্ছে।

এই স্ক্যামের সাম্প্রতিক স্ক্রিনশটগুলি ইন্টারনেট সিকিউরিটি রিসার্চার রাজশেখর রাজাহারিয়া (Rajshekhar Rajaharia) Twitter-এ শেয়ার করেছেন। স্ক্রিনশটগুলিতে একটি ভুয়ো URL-এর উল্লেখ রয়েছে, যেখানে ক্লিক করলে Chrome ব্রাউজারে একটি ফুল-পেজ পপ-আপ উইন্ডো ওপেন হয়। উইন্ডোটি দেখলে মনে হবে যে সেটি যেন আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় (Ministry of Law and Justice) থেকে এসেছে, যাতে বেশ জোর দিয়ে বলা হয় যে সংশ্লিষ্ট ইউজারের কম্পিউটারটি ডিক্রি নম্বর ১৭৩-২৭৯ -এর অধীনে “ব্লক করা হয়েছে”।

ইউজারকে রীতিমতো ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য পপ-আপটিতে আরও বলা থাকে যে, ব্রাউজারটি “ভারতীয় আইন দ্বারা নিষিদ্ধ কনটেন্ট দেখার এবং শেয়ার করার” জন্য লক করা হয়েছে। এরপরেই সংশ্লিষ্ট ইউজারের কম্পিউটার আনলক করার জন্য জরিমানা হিসেবে তার কাছ থেকে ২৯,০০০ টাকা চাওয়া হয়।

এখানেই শেষ হয়! মানুষ যাতে টাকাটা দিতে বাধ্য হয়, তাই তাকে চূড়ান্তরকমভাবে ভড়কে দেওয়ার জন্য পপ-আপটিতে আরও উল্লেখ করা থাকছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি টাকাটা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে মামলাটি ফৌজদারি কার্যাবলীর জন্য মন্ত্রণালয়ে (Ministry) স্থানান্তর করা হবে। পপ-আপটি তখন ব্যক্তিটিকে জরিমানা দেওয়ার জন্য ৬ ঘন্টার একটি সময় দেয়। এমনকি কীভাবে তিনি টাকাটা দেবেন সে সম্পর্কে বিশদে উল্লেখ করে পেজটিতে একটি Payment Details সেকশনও থাকছে, যেখানে ইউজাররা Visa বা MasterCard-এর মাধ্যমে এই টাকাটি প্রদান করতে পারেন। পপ-আপটি এই প্রতিশ্রুতিও দেয় যে, পেমেন্ট করার সাথে সাথে ব্রাউজারটি আনলক করা হবে।

এতক্ষণ যা বললাম, তা শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে ঘটনাটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। এটি সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে তথা ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অসৎ উপায়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য হ্যাকারদের একটি কলাকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই আপনার ব্রাউজারে যদি এরকম কোনো পপ-আপ শো হয়, তাহলে সেগুলিকে একেবারেই কোনো পাত্তা দেবেন না। এই ধরনের সতর্কীকরণ মেসেজগুলি আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে কোনোভাবেই আসে না। আর সবসময় মনে রাখবেন, আপনি যদি কোনোরকম অবৈধ কার্যকলাপ করতে গিয়ে ধরা পড়েন, তবে ভারত সরকার কখনোই তার বিনিময়ে আপনাকে অর্থ প্রদান করতে বলবে না।

তাহলে এখন আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসছে যে, আপনার কম্পিউটারে যদি এই ধরনের পপ-আপ শো করে, তাহলে তখন আপনি কী করবেন? সেই মুহূর্তে আপনার সর্বপ্রথম যেটা করা উচিত তা হল, পাওয়ার বাটনটিকে দীর্ঘক্ষণ ধরে হোল্ড করে রেখে সিস্টেমটিকে শাট ডাউন করে দিয়ে পুনরায় সেটিকে রিস্টার্ট করা। এর ফলে পপ-আপ উইন্ডোটিকে আর আপনার কম্পিউটারে দেখা যাবে না। সেইসাথে আপনি আপনার কম্পিউটারে একবার ভাইরাস প্রোটেকশন স্ক্যানও রান করাতে পারেন।