অ্যান্ড্রয়েড পলিসি ভঙ্গ করেই বছরের পর বছর ডিভাইসের তথ্য চুরি করতো টিকটক

ব্যবহারকারীদের অজান্তেই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতানো এবং সেগুলি চীনে পাঠানোর অভিযোগে ইতিমধ্যে ভারতবর্ষে ব্যান হয়েছে Tiktok । শুধুমাত্র ভারত নয় এমনকি মার্কিন প্রশাসনও টিকটককে দেশে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি মার্কিন নিউজ পেপার ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের’ তদন্তে সামনে এসেছে একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই ইনভেস্টিগেশানে উঠে এসেছে, টিকটক অ্যান্ড্রয়েডের প্রাইভেসি সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ করেই প্রায় এক বছরের বেশী সময় (১৮ মাস) ধরে ব্যবহারকারীদের MAC অ্যাড্রেস সংগ্রহ করছিল।

জানিয়ে রাখি, ম্যাক অ্যাড্রেস অথবা মিডিয়া অ্যাকসেস কন্ট্রোল অ্যাড্রেস একটি ইউনিক আইডেন্টিফিকেশান নম্বর। যেটি প্রত্যেকটি ডিভাইসের ব্যবহারকারীদের একটি ইউনিক আইডেন্টিটি প্রদান করে। ম্যাক অ্যাড্রেসটি পূর্বে ফোনে বিজ্ঞাপন দেখানোর উদ্যেশ্যে এবং ডিভাইস ট্র্যাকিং-এর জন্য ব্যবহার করা হতো।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে অ্যাপেলের অ্যাপস্টোর ও গুগলের প্লে স্টোর তাদের প্রাইভেসি পলিসিতে কিছু পরিবর্তন আনে। যেখানে বলা হয়, কোনো অ্যাপ্লিকেশানই এই দুটি প্ল্যাটফর্ম থেকে ব্যবহারকারীদের ম্যাক অ্যাড্রেস সংগ্রহ করতে পারবে না। কিন্তু The Verge-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও টিকটকের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ একটি লুপহোলের মাধ্যমে ইউজারদের ম্যাক অ্যাড্রেস সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি গোপনে চালিয়ে যাচ্ছিল’।

অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের উদ্বেগ বাড়িয়ে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এটাও জানিয়েছে, শুধুমাত্র Tiktok নয়৷ প্লে স্টোরে এরকম ৩৫০ টি অ্যাপ্লিকেশান এড-টার্গেট করার উদ্দেশ্যে একই পক্রিয়ায় ব্যবহারকারীদের ম্যাক অ্যাড্রেস সংগ্রহ করছে। WSJ-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রসাশনের তীব্র রাজনৈতিক চাপের মুখে এই ম্যাক অ্যাড্রেস কালেক্ট করার প্রক্রিয়াটি টিকটক গত বছরের নভেম্বর থেকে শুধুমাত্র স্থগিত রাখে।

খবরটি এমন একটি সময় সামনে এসেছে যখন টিকটককে আমেরিকাতে প্রাইভেসি সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। টিকটকের প্যারেন্ট অর্গানাইজেশন বাইটডান্স মার্কিন ইউজারদের ডেটা কিভাবে এবং কতটা পরিমানে সংগ্রহ করছে সেটি নিয়ে সংস্থাটিকে ইতিমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে টিকটকের বিরুদ্ধে এমন বিষ্ফোরক অভিযোগ সংস্থাটির পক্ষে খুব একটা স্বস্তিদায়ক হবে না বলে সূত্রের খবর।

গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডারে সাইন করেন। এতে বলা হয় যদি সংস্থাটি সেপ্টেম্বর ২০ র মধ্যে তাদের ইউএস অপারেশান অন্য কোনো সংস্থাকে বেঁচে দিতে অসমর্থ হয় , তাহলে হোয়াইট হাউস বাইটড্যান্সের সাথে সমস্তরকম ট্র্যানজাকশান বিচ্ছিন্ন করবে ৷

টিকটকের পক্ষ থেকে বরাবরই দাবী করে আসা হচ্ছে, একটি স্টান্ডার্ড মোবাইল অ্যাপ যেভাবে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ করে, টিকটকও একইভাবে ইউজারদের ইনফরমেশান কালেক্ট করে। ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের’ তদন্তটি সামনে আসার পর টিকটকের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, টিকটক ইউজাদের ম্যাক অ্যাড্রেস সংগ্রহ করা থেকে অনেকদিন ধরেই বিরত রয়েছে। বর্তমানে তাদের যে অ্যাপটি কোটি কোটি গ্রাহকদের ফোনে ইনস্টলড, সেটিও কোনোভাবেই আর ব্যবহারকারীদের ম্যাক অ্যাড্রেস সংগ্রহ করে না।