উদ্বেগ বাড়াচ্ছে Omicron, সুস্থ থাকতে বাড়িতে রাখুন এই ১০টি অত্যাবশ্যকীয় মেডিকেল গ্যাজেট

বছরশেষে চোখ রাঙিয়ে গোটা বিশ্বের পাশাপাশি ভারতেও দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে ওমিক্রন (Omicron)। দেশে ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাসের এই নতুন স্ট্রেনে আক্রান্তের সংখ্যা ১,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক (union health ministry) সূত্রে জানা গেছে যে, দেশের ৮টি জেলায় ১০%-এর বেশি এবং প্রায় ১৫টি জেলায় ৫%-এর বেশি পজিটিভিটি রেট প্রত্যক্ষ করা গেছে। ওমিক্রনের উপসর্গ অনেকটাই করোনার মতো হলেও কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওমিক্রনের ক্ষেত্রে নতুন একটি উপসর্গ দেখা গিয়েছে, তা হল গলা ব্যথা এবং গলার স্বর বদলে যাওয়া। এছাড়া ওমিক্রনের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, আক্রান্তদের বেশিরভাগই ক্লান্তি, গাঁটে ব্যথা, ঠান্ডা লাগা, শুকনো কাশি এবং মাথাযন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন। তবে স্বাদ বা গন্ধের অনুভূতি চলে যাওয়ার মতো উপসর্গ ওমিক্রন আক্রান্তদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না।

করোনার মতোই ওমিক্রনের ভয়াল থাবার হাত থেকে বাঁচতেও সমস্ত প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে বাড়িতে বেশ কিছু মেডিকেল গ্যাজেট এবং ডিভাইস রেখে দেওয়া একান্ত আবশ্যক, যাতে আদৌ ওমিক্রনের কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে কি না সেটা ঘরে বসেই পরীক্ষা করে নেওয়া যায়। তাই নীচে এরকমই ১০ টি প্রয়োজনীয় জিনিসের কথা উল্লেখ করা হল যা দেশের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে সকলের বাড়িতে মজুত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পালস অক্সিমিটার: রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করে

এই কঠিন মহামারীর পরিস্থিতিতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি মেডিকেল গ্যাজেট হল পালস অক্সিমিটার, যা প্রত্যেকের বাড়িতে থাকা উচিত। কারণ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। তাই রক্তে অক্সিজেনের পরিমাপ নিরীক্ষণ করার জন্য বাড়িতে পালস অক্সিমিটার রাখা একান্ত আবশ্যক। তবে সেই অক্সিমিটারগুলি কেনাই সবথেকে ভালো যেগুলি পালস রিডিংও দেখাতে সক্ষম। অফলাইন এবং অনলাইন উভয় প্ল্যাটফর্মেই ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২,৫০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন পালস অক্সিমিটার কিনতে পাওয়া যায়।

ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মনিটর: রক্তচাপ এবং পালস রেট পরিমাপ করে

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আরেকটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হল ব্লাড প্রেসার ওঠানামা করা। তাই বাড়িতে একটি ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মনিটর থাকা অত্যাবশ্যক। অনলাইনে কিংবা অফলাইন স্টোর থেকে এই মেশিনটি কিনতে হলে আপনাকে প্রায় ৩,০০০ টাকা ব্যয় করতে হবে।

কন্ট্যাক্টলেস থার্মোমিটার: দূর থেকে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করে

করোনা বা ওমিক্রন যাই হোক না কেন, সর্বপ্রথম যে লক্ষণটি দেখা যায় সেটি হল জ্বর। তাই দেহের তাপমাত্রা নিরীক্ষণের জন্য প্রত্যেকের বাড়িতে একটি কন্ট্যাক্টলেস থার্মোমিটার থাকা বাঞ্ছনীয়। এই যন্ত্রটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধাটি হল, কোনোরকম ফিজিক্যাল কন্টাক্ট ছাড়াই ১-২ ইঞ্চি দূর থেকেও এটি শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে পারে। আর এই ধরনের মহামারীর ক্ষেত্রে সোশ্যাল ডিসটেন্সই যেহেতু সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, তাই এই যন্ত্রটি ব্যবহার করলে আশেপাশের লোকের সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে যায়। অফলাইন স্টোরের পাশাপাশি অনলাইনে ১,০০০ টাকারও কম দামে এটি কিনতে পাওয়া যায়।

কোভিড-১৯ র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন সেলফ টেস্ট কিট: বাড়িতে বসেই অ্যান্টিজেন টেস্ট করা যাবে

কোভিড-১৯ র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন সেল্ফ টেস্ট কিটকে ঠিক একটি গ্যাজেট বলা চলে না, তবে এটির সাহায্যে ব্যবহারকারীরা বাড়িতে বসেই নিজেদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে পারবেন। এই কোভিড-১৯ সেল্ফ টেস্টিং কিটটি অনলাইনে ও অফলাইন মেডিকেল স্টোর থেকে কেনা যাবে এবং এটির দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। 

গ্লুকোমিটার: রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করে

এই ধরনের সংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার ওপরও নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এই গ্লুকোমিটার সমস্ত ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নির্ধারণ করতে অত্যন্ত পটু, ফলে এই যন্ত্রটি বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে রাখা অত্যন্ত আবশ্যক। মার্কেটে ৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের গ্লুকোমিটার পাওয়া যায়।

UV স্টেরিলাইজার: স্মার্টফোন এবং অন্যান্য ডিভাইসগুলিকে জীবাণু এবং অন্যান্য সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে

জামাকাপড় বা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিসের ওপর স্যানিটাইজার প্রয়োগ করা গেলেও আমাদের রোজকার ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা গ্যাজেটগুলিতে (যেমন – স্মার্টফোন, হেডফোন ইত্যাদি) কিন্তু স্যানিটাইজারের প্রয়োগ করা উচিত নয়। কিন্তু এগুলির মাধ্যমেও তো এই মারণ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে! তাহলে উপায় কী? এই সমস্যার সমাধান হল UV স্টেরিলাইজার। এমনিতেই UV রেডিয়েশন অছিদ্রযুক্ত পৃষ্ঠ, বায়ু এবং জলের জন্য জীবাণুনাশক হিসেবে পরিচিত। এই UV স্টেরিলাইজারের সাহায্যে আমাদের এই নিত্যপ্রয়োজনীয় গ্যাজেট বা ডিভাইসগুলিকে জীবাণু তথা অন্যান্য সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব। একটি ভালো মানের স্টেরিলাইজার কিনতে গেলে আপনাকে ন্যূনতম ১,০০০ টাকা ব্যয় করতে হবে।

অক্সিজেন কনসেনট্রেটার: তাজা এবং বিশুদ্ধ অক্সিজেনে শ্বাস নিতে সহায়তা করে

গত প্রায় দু-বছর ধরে করোনা মহামারীর কারণে এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটারের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। করোনায় যেহেতু রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বিশেষভাবে দেখা যায়, তাই এই সাম্প্রতিক মহামারী পরিস্থিতিতে এটি প্রত্যেকের বাড়িতে রাখা উচিত। এগুলি অনলাইনে এবং অফলাইন মেডিকেল স্টোরগুলিতে উপলব্ধ। তবে কেনার আগে যন্ত্রটির ওয়ারেন্টি ডিটেলস, সার্ভিস নেটওয়ার্ক, এবং অথেন্টিসিটি চেক করে নিন।

পোর্টেবল অক্সিজেন ক্যানিস্টার: শ্বাসকষ্টের জন্য স্বল্পমেয়াদী সমাধান

খুব বিশেষভাবে কার্যকর না হলেও যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়া পর্যন্ত শ্বাসকষ্টের সমস্যার সমাধান করতে বাড়িতে একটি পোর্টেবল অক্সিজেন ক্যানিস্টার রাখা বেশ কার্যকর। তবে মনে রাখবেন, এটি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার সমাধান খুব স্বল্প মেয়াদের জন্য করতে পারে।

SpO2 এবং হার্ট রেট মনিটর সহ ফিটনেস ব্যান্ড: আপনার স্বাস্থ্যের ট্র্যাক রাখতে সহায়তা করে

এই ধরনের সংক্রামক ব্যাধিতে হৃদস্পন্দনের হার ওঠানামা করতে দেখা যায়। তাই সাশ্রয়ী মূল্যের এই ফিটনেস ব্যান্ড বাড়িতে মজুত রাখা অবশ্যই উচিত। এই ফিটনেস ব্যান্ডগুলিতে হার্ট রেট মনিটর, SpO2 মনিটর, ইত্যাদির মতো হেলথ মনিটরিং ফিচারগুলি রয়েছে। এগুলি আপনার স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখার পাশাপাশি আপদকালীন অবস্থায় যথাযথভাবে সহায়তা করতে সক্ষম।

নেবুলাইজার মেশিন

নেবুলাইজার মেশিনটি ফুসফুসে সরাসরি দ্রুতগতিতে অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ডিভাইসটি অনলাইনে উপলব্ধ এবং এটির দাম শুরু হচ্ছে ১,৫০০ টাকা থেকে।