শরীরে কঠিন রোগ বাসা বাঁধলেও লক্ষণ নেই, আগে ভাগে জানিয়ে ব্যবহারকারীর জীবন বাঁচাল Apple Watch

মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন প্রাপ্ত না হলেও, অ্যাপল বিকশিত স্মার্টওয়াচ (Apple Watch) এখন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা সনাক্ত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘টুল’ হয়ে উঠেছে। কেননা এই ওয়াচগুলির হেলথ ফিচারের সাহায্যে – হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা, হার্ট ব্লকেজ, অসামঞ্জস্য ব্লাড প্রেসার লেভেল বা থাইরয়েডের উপসর্গ জানা যায়। সম্প্রতি আবার একজন ব্যক্তির শরীরে মারাত্মক টিউমার থাকার সতর্কতাবানী দেওয়ার মাধ্যমে পুনরায় খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে Apple Watch। জানা যাচ্ছে, অক্রমিক ও দ্রুত হার্ট বিট ডিটেক্ট করায় একটানা ‘এলার্ট মেসেজ’ পাঠিয়ে বারংবার সতর্ক করছিল ডিভাইসটি। যারপর ডাক্তারের কাছে চেকআপ করতে গিয়ে ‘ফাস্ট গ্রোয়িং’ টিউবারের কারণে খুব শীঘ্রই স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল বলে জানতে পারেন তিনি। কিন্তু ওয়্যারেবলটির দৌলতে আগাম এই বিষয়ে অবগত হওয়ার জন্য প্রাণে বেঁচে যান এই Apple ব্যবহারকারী। ফলে একবার নয়, বারংবার নির্ভুল হেলথ আপডেট প্রদান করার মাধ্যমে Apple Watch বর্তমানে ‘লাইভ সেভার’ ডিভাইসে পরিণত হয়েছে, বললে ভুল কিছু বলা হবে না।

শরীরে বর্ধনশীল মারাত্মক টিউমার সনাক্ত করতে সহায়তা করে প্রাণ রক্ষা করলো Apple Watch

কিম ডুরকি নামের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহারকারীর বিবৃতি অনুসারে, তার ওয়্যারেবলটি একটানা দুই রাত ধরে বারংবার অ্যালার্ট নোটিফিকেশন পাঠাচ্ছিল। যেখানে, বিগত কয়েক মাস যাবৎ তার হার্ট ‘অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন’ অনুভব করছে বলে দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু শরীরে কোনো অসুস্থ বোধ না হওয়ায় কিম ভেবেছিলেন যে অ্যাপলের এই ওয়্যারেবল হয়তো ‘ফলস অ্যালার্ট’ দিচ্ছে। কিন্তু তৃতীয় রাতেও ওয়াচটি অনুরূপ সতর্কতা পাঠানোর পর, তিনি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার সিদ্ধান্ত নেন। কেননা, “তিনবার একই রকম হেলথ ইস্যু সংক্রান্ত অ্যালার্ট আসা অস্বাভাবিক ঠেকছিল” বলে জানান কিম।

যদিও একটি স্মার্টওয়াচের দ্বারা সনাক্ত করা শারীরিক সমস্যা কতটা সঠিক সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না কিম। ফলে তিনি “হাসপাতালের এমার্জেন্সি সেকশনে ভর্তি হওয়ার পরও যদি ডাক্তাররা কোনো অস্বাভাবিক শারীরিক লক্ষণ বা রোগ না খুঁজে পান, এবং এই পুরো ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করতে বারণ করেন” তাহলে ঘড়িটি ফেলে দেওয়াই সব থেকে উচিত কাজ হবে বলে মনস্থির করেন। কিন্তু, হসপিটালে যাওয়ার পর জানা যায় যে, অ্যাপল ওয়াচটির পূর্বাভাস প্রকৃতপক্ষেই সত্য, অর্থাৎ হার্টে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন ঘটার কারণেই বার বার অ্যালার্ট আসছিল তার কাছে। যদিও তখন পর্যন্ত এই অক্রমিক তথা দ্রুত হৃদস্পন্দনের কারণটি অজানা ছিল।

একাধিক টেস্ট পরিচালনার মাধ্যমে পরবর্তীতে জানা যায় যে, এই পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে কিমের শরীরে থাকা একটি ভয়ানক টিউমারের জন্য। হাসপাতালের ডাক্তাররা শীঘ্রই নিশ্চিত করেন যে, “কিমের হৃদয় ভীতিজনক কারণে অনিয়মিতভাবে স্পন্দিত হচ্ছে”। টেস্ট রিপোর্টে অনুসারে, তার মাইক্সোমা (myxoma) আছে। সহজ ভাষায় বললে, “মাইক্সোমা হল একটি বিরল ও দ্রুত বর্ধনশীল টিউমার, যা হার্টের রক্ত ​​​​সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং অন্তে স্ট্রোক পর্যন্ত ঘটাতে পারে”।

যাইহোক অ্যাপল ওয়াচ প্রদত্ত সতর্কতা ও টেস্ট রিপোর্টকে গাম্ভীর্যের সাথে নিয়ে, ডাক্তাররা তৎক্ষণাৎ কিম ডুরকি -কে ‘ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে’ নিয়ে যান এবং পাঁচ ঘণ্টার ওপেন হার্ট সার্জারি পরিচালনা করার মাধ্যমে তারা এই মারাত্মক টিউমারটি অপসারণ করেন। কিম জানান যে, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন ছাড়া অন্য কোনো উপসর্গ অ্যাপল ওয়াচে ধরা পড়েনি। তাই ওয়্যারেবলটি যদি আগাম সতর্ক না করতো, তাহলে ওই চার সেন্টিমিটারের ‘ফাস্ট গ্রোয়িং’ টিউমারটির কারণে কিছু দিনের মধ্যেই প্রায় নিশ্চিতভাবে প্রাণহানি ঘটতো কিমের।

যাইহোক, চলতি বছরে অ্যাপল ওয়াচের এমন অনেক প্রাণ রক্ষার কাহিনী ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। যেমন গত মার্চ মাসে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুসারে, হরিয়ানার যমুনানগরের বাসিন্দা এক ডেন্টিস্টের জীবন বাঁচিয়েছিল অ্যাপল ওয়াচ। নীতেশ চোপড়া নামের এই ব্যক্তিটি তার স্ত্রীর জন্য জন্মদিনের উপহার হিসাবে Apple Watch Series 6 কিনেছিলেন। কৌতুহল বশে নীতেশ যখন এই পরিধানযোগ্য ডিভাইসে তার ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম বা ECG পরীক্ষা করেন, তখন এটি দুবার অ্যারিথমিয়া সিগন্যাল (arrhythmia signals) বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের অ্যালার্ট পাঠায়। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তিনি নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে পরীক্ষা করান। পরবর্তীতে, এনজিওগ্রাফি রিপোর্ট এলে জানা যায় তার হৃদযন্ত্রে বিশাল ব্লকেজ আছে।