সিম সোয়াপ জালিয়াতিতে ৯.৫ লক্ষ টাকা খোয়ালেন মহিলা, না জানলেই আপনিও হারাবেন সর্বস্ব

নয়ডার একজন বাসিন্দাকে সম্প্রতি ঠকিয়ে তার কাছ থেকে ৯.৫ লক্ষ টাকা হাতলো জালিয়াতরা। এই মহিলার নাম বর্ষা আগরওয়াল এবং তিনি নয়ডার সেক্টর ৮-র বাসিন্দা। তার ৩জি সিম কার্ডকে ৪জি সিম কার্ডে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হবে এই আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে টাকা চুরি করা হয়েছে। তিনি তার নিকটবর্তী থানায় একটি এফআইআর দায়ের করে সম্পূর্ণ ঘটনা জানিয়েছেন।

বিগত ৭ মে তার কাছে একটি ফোন কল আসে যেখানে ফোন এর বিপরীত দিকে থাকা ব্যক্তি নিজেকে কাস্টমার কেয়ারের এক্সিকিউটিভ বলে দাবি করে। সে তাকে জানায় যে তিনি একটি ৩জি মোবাইল সিম কার্ড ব্যবহার করছেন এবং তাকে সেটি ৪জি নেটওয়ার্কে স্থানান্তরিত করতেই হবে না হলে সিম কাজ করা বন্ধ করে দেবে। তাকে রাজি করানোর পর জালিয়াত তাকে সিম সোয়াপের ফর্ম ফিলাপ করতে বাধ্য করে।

সে তাকে আরো জানায় যে এই আপগ্রেড করার জন্য তার সিমকার্ড ৭২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু সিম সোয়াপ করার ফলে তার পুরনো নাম্বারটি জালিয়াতের একটি অন্য নাম্বারে চালু হয়ে যায়। এরপর জালিয়াত তার ওই নম্বরটি ব্যবহার করে কার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অনেক টাকা তুলে নেয়।

৬ দিন পরেও তার সিমকার্ড চালু না হওয়ায় বর্ষা তার ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেখান থেকে জানা যায় যে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ঝাড়খন্ডের কোন একটি অ্যাকাউন্টে ৮ থেকে ১১ মে তারিখের মধ্যে ২২টি লেনদেনের মাধ্যমে ৯.৫২ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার ওই মহিলা সাইবার সেল ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের ৪২০ ধারায় এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্টের ৬৬ ধারায় এফআইআর দায়ের করে। পুলিশ এই মামলা তদন্ত ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে।

কি আসলে এই সিম সোয়াপ-

এটির মূল অর্থ সিম কার্ড পরিবর্তন বা সিম কার্ডের ক্লোনিং। এর মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার ফোনে একটি নতুন সিমের রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়া যেতে পারে। নতুন সিম রেজিস্টার হয়ে যাবার পর এই আপনার পুরনো সিম কার্ডটি বন্ধ হয়ে যায় এবং সেই সিম কার্ড থেকে থেকে সমস্ত সিগন্যাল চলে যায়। তারপর আপনার ফোনে নতুন রেজিস্টার্ড হওয়া সিম কার্ডে আসা ওটিপি ব্যবহার করে হ্যাকাররা আপনার ব্যাংকের সমস্ত টাকা চুরি করে।

এটি শুরু কিভাবে হয়-

এই জালিয়াতির ব্যবস্থাটি শুরু হয় একটি ফোন কল থেকে। ফোনের ওই পাশে থাকা ব্যক্তিটি আপনার কাছে দাবি করে যে সে এয়ারটেল ভোডাফোন বা জিও এর মত সার্ভিস প্রোভাইডারের এক্সিকিউটিভ। এবং আপনাকে আপনার ফোনের কল ড্রপ এবং ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানোর মত কাজ নিয়ে কথা বলতে থাকে। তারপরই তারা আপনার কাছ থেকে আপনার সিমের ইউনিক নম্বরটি চাওয়ার চেষ্টা করে। এই নম্বরটি একটি কুড়ি অংকের নম্বর এবং এটি আপনার সিমের পিছনে লেখা থাকে। এই ইউনিক নম্বরটি দিয়ে দেওয়ার পর আপনাকে ১ প্রেস করতে বলবে। ১ প্রেস করলেই অথেন্টিকেশন সম্পূর্ণ হয়ে যাবে এবং আপনার সিম সোয়াপ প্রসেস সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

চলে যায় ফোনের সিগন্যাল-

এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই তৎক্ষণাৎ আপনার ফোনের সিগন্যাল চলে যায় এবং উল্টোদিকে আপনার সিম নম্বর থাকা হ্যাকারের কাছে সম্পূর্ণ সিগন্যাল পৌঁছতে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই হ্যাকারের কাছে আপনার ব্যাংকের ডিটেলস থাকে। তার দরকার হয় শুধুমাত্র আপনার ফোন নাম্বারে আসা ওটিপি। এখন তার কাছে ওটিপি ও চলে আসে, ফলে এখন তার কাজ হলো ওটিপি জেনারেট করে আপনার ব্যাংক থেকে টাকা পয়সা লুঠ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *