BharOS vs Android: ভারতের নিজস্ব মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম BharOS সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

Avatar

Published on:

BharOS vs Android

হালফিলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্মার্টফোনে Android অপারেটিং সিস্টেমের (ওএস) দেখা মেলে। খুব কম সংখ্যক মানুষ বাদে আজকাল প্রায় সকলের হাতে হাতেই ঘুরছে Android স্মার্টফোন। ফলে চলতি সময়ে গোটা বিশ্বের স্মার্টফোন মার্কেটে যে Google-এর এই ওএসটি একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য। তবে Android-কে টেক্কা দিতে হালফিলে একটি দেশীয় মোবাইল ওএস বাজারে এনেছে ভারত। মাদ্রাজের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অর্থাৎ আইআইটি (IIT) দেশের ১০০ কোটিরও অধিক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে চলতি সময়ে ভারওএস (BharOS) নামক একটি নতুন মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে, যেটিকে ইতিমধ্যেই Android-এর সুযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী বলে দাবি করছেন বিদ্বজনেরা। ফলে বর্তমানে আপামর দেশবাসীর মনে এই স্বদেশী ওএসটির সম্পর্কে বিশদে জানার কৌতূহল ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসুন, BharOS কী এবং এই মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমটি Android-এর থেকে কীভাবে আলাদা, সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।

BharOS কী?

ভারওএস একটি দেশীয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। সোজা কথায় বলতে গেলে, এটি অ্যান্ড্রয়েডের অনুরূপ লিনাক্স-কার্নেল ভিত্তিক ওএস, তবে উভয়ের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ভারওএসে কোনো অ্যাপ্লিকেশন প্রিলোড করা থাকে না (যেখানে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমযুক্ত মোবাইল ফোনে আগে থেকেই একগুচ্ছ অ্যাপ মজুত থাকে)। অর্থাৎ, ব্যবহারকারীরা নিজেদের পছন্দসই অ্যাপ্লিকেশনগুলিকে চয়ন করে ডাউনলোড করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাবেন। অর্থাৎ সহজে বললে, এই স্বদেশী মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমটি ইউজারদেরকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যাপ নির্বাচন এবং ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান করে। এর ফলে নিজেদের ডিভাইসের ওপর ব্যবহারকারীরা আরও ভালো নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হবেন, যার সুবাদে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার দিকটি আরও অধিক পরিমাণে সুরক্ষিত থাকবে।

বলে রাখি, ভারওএস জেন্ডকে অপারেশনস প্রাইভেট লিমিটেড (JandK Operations Private Limited বা JandKops) নামক একটি কোম্পানি তৈরি করেছে, যা আইআইটি মাদ্রাজ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি সেকশন ৮ (অলাভজনক) সংস্থা। এই সফটওয়্যারটি কমার্শিয়াল অফ-দ্য-শেল্ফ হ্যান্ডসেটগুলিতে ইনস্টল করা যেতে পারে। এই দেশীয় ওএসটির বিশেষত্ব হল, এটি হাই-টেক সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি সহ আসে। এদেশের ১০০ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারীকে নিজেদের অধীনে আনাই হলো ভারওএসের মূল লক্ষ্য।

BharOS কী ধরনের অ্যাপ্লিকেশন সরবরাহ করবে?

ভারওএস ইন্ডিভিজ্যুয়াল বিজনেস অর্গ্যানাইজেশনগুলিকে প্রাইভেট অ্যাপ স্টোর সার্ভিস অর্থাৎ পাস (PASS) কর্তৃক সংগৃহীত অ্যাপ্লিকেশনগুলির অ্যাক্সেস সরবরাহ করে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, একেবারে নিখুঁতভাবে সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসি চেক করা হয়েছে, এমন কিছু বিশেষ কার্যকর অ্যাপ্লিকেশনের অ্যাক্সেস প্রদান করে পাস। অর্থাৎ, ব্যবহারকারীরা একেবারে নিশ্চিত হতে পারবেন যে, তাদের ডিভাইসে ইন্সটল করা অ্যাপগুলি ব্যবহার করা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ এবং সেগুলির জন্য তাদেরকে কখনও কোনোরকম বিপদের সম্মুখীন হতে হবে না। তদুপরি, পাস কিন্তু যে-কোনো ব্যক্তিকে তাদের সুবিশাল অ্যাপের ভাণ্ডারের অ্যাক্সেস সরবরাহ করে না। ফলে ভারওএসের সহায়তায় ইউজাররা যে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন, সেকথা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

BharOS-ই কি প্রথম ভারতীয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম?

প্রকৃতপক্ষে ভারওএস কিন্তু প্রথম দেশীয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম নয়। কারণ ইলেকট্রনিক্স এবং আইটি মন্ত্রকের অধীনে ভারত সরকারের ইউনিট সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অফ অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং বা সিডিএসি (CDAC) মাইক্রোসফ্ট উইন্ডোজ (Microsoft Windows)-এর বিকল্প হিসেবে ২০০৭ সালে ভারত অপারেটিং সিস্টেম সলিউশনস (BOSS) তৈরি করেছিল। লিনাক্সের উপর ভিত্তি করে নির্মিত BOSS-ই ভারতের প্রথম ওএস হবে বলে সে সময় ভাবা হয়েছিল। তবে অপর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা এবং টাকার কারণে সেই পরিকল্পনা আর বাস্তবায়িত হয়নি।

BharOS কি সবার জন্য উপলব্ধ?

বর্তমানে ভারওএসের উপলব্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে নির্মাতারা জানিয়েছেন যে, ইতিমধ্যেই আলোচ্য ওএসটি এমন কিছু নামজাদা প্রতিষ্ঠানকে অফার করা হয়েছে, যাদের নিজস্ব সংবেদনশীল তথ্যাবলীকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আঁটোসাঁটো সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন। তবে ভবিষ্যতে আরও বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীদের জন্য এই স্বদেশী অপারেটিং সিস্টেম উপলব্ধ হবে বলে আশা করা যেতে পারে।

সঙ্গে থাকুন ➥