FASTag রিচার্জ করতে গিয়ে খোয়া গেল ১ লক্ষ টাকা, এই ভুল আপনিও করছেন না তো

রিচার্জ করার জন্য দোকানে যাওয়া বা কোনো কিছুর বিল মেটাতে কাউন্টারের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এখন একটি সেকেলে ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বললেই চলে। কেননা চলতি সময়ে (বিশেষত করোনা মহামারীর আগমনের পর থেকে) অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম ইউজারদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে যে, এখন ইলেকট্রিক বিল মেটানো, ট্রেনের টিকিট বুকিং, বা রিচার্জ করার মতো জরুরি কাজগুলি মোবাইলে কয়েকটা ক্লিকের মাধ্যমে অতি অনায়াসে হয়ে যায়। এমনকি রাস্তায় টোল ট্যাক্স মেটাতে গেলেও এই মুহূর্তে ব্যাপক কার্যকরী অনলাইন পেমেন্ট, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে গাড়ির মালিকদের জন্য ফাস্ট্যাগ (FASTag) রিচার্জ নিত্যনৈমিত্তিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত বলে রাখি, ফাস্ট্যাগ হল এক ধরনের ডিজিটাল ট্যাগ বা স্টিকার, যা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন বা আরএফআইডি (RFID) প্রযুক্তিতে কাজ করে। এর সুবাদে টোল প্লাজার মধ্যে দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির সামনের কাঁচের ওপরে লাগানো ট্যাগটি স্ক্যান হতেই পাসিং গেট খুলে যায়। ফলে সময় নষ্ট করে যাত্রীদের আর টোল প্লাজায় দাঁড়াতে হয় না, যার জেরে অনেকটাই সময় সাশ্রয় হয়। তবে চলতি সময়ে ভারত সহ গোটা বিশ্বজুড়ে অনলাইন পেমেন্টকে কেন্দ্র করে সাইবার জালিয়াতির ঘটনা যে হারে বাড়ছে, তাতে এবার ফাস্ট্যাগ রিচার্জ করার আগেও ইউজারদেরকে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী, হালফিলে ফাস্ট্যাগ রিচার্জ করতে গিয়ে বেশ বড়োসড়ো প্রতারণার শিকার হয়েছেন কর্নাটকের এক ব্যক্তি, যার জেরে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা! কিন্তু কীভাবে ঘটলো এই মর্মান্তিক ঘটনা? আসুন জেনে নিই।

FASTag রিচার্জ করার জন্য হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে প্রায় ১ লক্ষ টাকা হারালেন এক ব্যক্তি

দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (The New Indian Express)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্রান্সিস পিয়াস (Francis Pius) নামের এক ব্যক্তি গত ২৯ জানুয়ারি তার নিজের গাড়িতে করে উডুপির ব্রহ্মভারা থেকে মাংলুরু যাচ্ছিলেন। কিন্তু হেজামাডির একটি টোল প্লাজায় পৌঁছে তিনি দেখেন যে, তার ফাস্ট্যাগে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স নেই, ফলে টোল গেটের টাকা মেটানো তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই তৎক্ষণাৎ নিজের ফাস্ট্যাগ রিচার্জ করার জন্য তিনি ইন্টারনেটে হেল্পলাইন নম্বরের খোঁজ করতে থাকেন। এরপর খুঁজতে খুঁজতে তিনি হঠাৎই একটি হেল্পলাইন নম্বরের সন্ধান পান এবং রিচার্জ করার আশায় অবিলম্বে সেটিতে ফোন করে বসেন। কিন্তু তখন তিনি ঘুনাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি যে, ওই অজানা নম্বরটিতে ফোন করলে তিনি বেশ বড়ো রকমের সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়ে যাবেন।

রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ফোন করা মাত্রই অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি পিয়াসের কলটি রিসিভ করেন। ব্যক্তিটি পেটিএম ফাস্ট্যাগ (Paytm Fastag)-এর প্রতিনিধি হিসেবে নিজের পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি পিয়াসকে সবরকমভাবে সহায়তা করার আশ্বাসও দেন। এরপরে পূর্ব ঘটা বহু সাইবার জালিয়াতির ঘটনার মতো করেই পিয়াসকেও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ওই ব্যক্তি। এক্ষেত্রে ফাস্ট্যাগের রিচার্জ প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ফোনের অপর প্রান্তে থাকা জালিয়াতটি ফ্রান্সিসকে একটি অজানা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করার নির্দেশ দেয় এবং তারপরে তার মোবাইল ফোনে আসা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি (OTP) শেয়ার করতে বলে। স্বভাবতই রিচার্জ করার আশায় পিয়াসও তৎক্ষণাৎ তাকে ওটিপিটি দিয়ে দেন, আর এর পরেই শুরু হয় আসল খেলা!

একের পর এক ট্রানজ্যাকশন মারফত পিয়াসের অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যায় প্রায় এক লক্ষ টাকা!

ওটিপি শেয়ার করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পিয়াসের ফোনে ব্যাঙ্ক থেকে একের পর এক ট্রানজ্যাকশন মেসেজ আসতে থাকে, যা দেখে তিনি রীতিমতো হতচকিত হয়ে যান। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম এসএমএসের মাধ্যমে পিয়াস জানতে পারেন যে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৯,০০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপর একের পর এক মেসেজ মারফত নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে যথাক্রমে ১৯,৯৯৯ টাকা, ১৯,৯৯৮ টাকা, ৯,৯৯৯ টাকা এবং ১,০০০ টাকা গায়েব হওয়ার খবর পান তিনি। ফলে সবমিলিয়ে, এই কেলেঙ্কারিতে মোট ৯৯,৯৯৬ টাকা খোয়াতে হয়েছে পিয়াসকে, যা নিঃসন্দেহে খুবই দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার।

এই ঘটনার পর পিয়াস খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারেন যে, তিনি সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। ফলে জালিয়াতদের হাতেনাতে ধরার আশায় তিনি তৎক্ষণাৎ উডুপি সিইএন থানায় গিয়ে নিজের অভিযোগ জানান। এই অভিযোগের ভিত্তিতে উডুপি সিইএন থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ (সি) এবং ৬৬ (ডি) ধারায় একটি সাইবার জালিয়াতির মামলা দায়ের করে পুলিশ। বর্তমানে অপরাধীদের সন্ধান পাওয়ার জন্য পুলিশ জোরকদমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

ঠিক কী কারণে এরকম শোচনীয় দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলেন পিয়াস?

এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, যদিও আলোচ্য ঘটনাটিতে পিয়াস ফাস্ট্যাগ রিচার্জ করাতে গিয়ে সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন, তবে এটিকে কিন্তু ফাস্ট্যাগ রিচার্জ হেল্পলাইন নম্বর কেলেঙ্কারি বলা চলে না। আদতে এটি একটি ফিশিং বা ভুয়ো লিঙ্ক স্ক্যাম। আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, ইদানীংকালে সহজসরল সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জালিয়াতরা কোনো নামজাদা কোম্পানির অনুকরণে একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে, যেটিকে দেখতে হুবহু আসল ওয়েবসাইটের মতোই হয়। ফলে ব্যবহারকারীরা এক ঝলক দেখলে তাদের মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয় না যে সেটি আদতে নকল ওয়েবসাইট।

এরপর ব্যবহারকারীদেরকে খুব সহজেই প্রতারিত করার জন্য সেই জাল ওয়েবসাইটে সাইবার অপরাধীরা কিছু ভুয়ো হেল্পলাইন নম্বর দিয়ে রাখে। আবার, যেহেতু অনলাইনে কাস্টমার কেয়ার নম্বর সহজেই এডিট করা যায়, তাই অসৎ উদ্দেশ্যে অনেকেই নিজেদের ইচ্ছেমতো সেই নম্বরগুলিকে এডিট করে দেন। এর জেরে সাধারণ মানুষকে অযথা প্রতারণার শিকার হতে হয়। এছাড়া, ভুয়ো ওয়েবসাইটে অনেক ক্ষেত্রেই বেশ কিছু ম্যালিশিয়াস লিঙ্কের উল্লেখ থাকে, যেগুলিতে ক্লিক করলেই ইউজারদের ডিভাইসের সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস চলে যায় স্ক্যামারদের হাতে। আর এর ফলটা যে কী হয়, সে সম্পর্কে আর কাউকেই নিশ্চয়ই নতুন করে কিছু বলে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ফলে চলতি সময়ে হ্যাকারদের হাত থেকে নিরাপদে থাকতে হলে ইউজারদের উপরিউক্ত বিষয়গুলি মাথায় রাখা একান্ত আবশ্যক।

ভুয়ো ওয়েবসাইট চেনার উপায়

▪️ যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফিশিং লিঙ্কে বানান ভুল থাকে, তাই ডোমেইন নেম খুব নিখুঁতভাবে চেক করা জরুরি। প্রচুর সংখ্যক ভুল বানান এবং ব্যাকরণগত ত্রুটি চোখে পড়লেই নির্দ্বিধায় বুঝে নিতে হবে যে, সেটি নির্ঘাত কোনো ম্যালিশিয়াস লিঙ্ক।

▪️ প্যাডলক সিম্বল আছে কি না, তা চেক করে দেখে নিতে হবে। কারণ এটির অস্তিত্ব নিশ্চিত করবে যে সাইটটি ওপেন করা একেবারেই নিরাপদ।

▪️ ভুয়ো ওয়েবসাইট চেক করার জন্য ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইট চেকার বা কোনো সেফ ব্রাউজিং টুল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ স্ক্যান করে জাল বা ম্যালিশিয়াস ভাইরাসযুক্ত ওয়েবসাইট সনাক্ত করতে এগুলির জুড়ি মেলা ভার।

▪️ ডোমেইনের এজ বা বয়স চেক করে নেওয়া একান্ত আবশ্যক। অর্থাৎ সহজে বললে, কবে পেজটি তৈরি করা হয়েছে, তা জেনে নেওয়া ইউজারদের জন্য খুবই জরুরি।

▪️ কোন লিঙ্ক ওপেন করার আগে তার ইউজার রিভিউ কিংবা সেটির সম্পর্কে আগে কোনো স্ক্যাম রিপোর্ট করা হয়েছে কি না, তাও যাচাই করে দেখে নেওয়া দরকার।

কীভাবে খুব দ্রুত তথা নিরাপদে FASTag রিচার্জ করবেন?

ইউজাররা পেটিএম (Paytm), জিপে (Gpay), ফোনপে (PhonePe) সহ অন্যান্য যে-কোনো ইউপিআই (UPI) অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে FASTag রিচার্জ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে রিচার্জ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ইউজারদেরকে নিজের কার্ড ডিটেইলস এন্টার করতে হবে, এবং তারপরে প্রক্রিয়াটিকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য অ্যাপ কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশাবলী সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে।