গোটা বিশ্বের ১৮ শতাংশ iPhone তৈরি হবে ভারতে, সরকারের ইনসেনটিভ স্কিমের ফায়দা নিচ্ছে Apple

২০২৫ সালের মধ্যে Apple তাদের মোট আইফোন উৎপাদনের ১৮% -এরও বেশি ভারতে স্থানান্তর করতে পারে

টেক জায়ান্ট অ্যাপল (Apple) তাদের সাপ্লায়ারদের সহায়তায় ভারতের মাটিতে ইতিমধ্যেই আইফোন তৈরি করে চলেছে। জানা গেছে, অর্থ বর্ষ ২০২৩ (FY2023) -এ ৭% আইফোন এদেশে তৈরি হবে। তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে Apple ডিভাইস তৈরির ক্ষেত্রে বড়সড় পরিবর্তন ঘটাতে চলেছে বলেই মনে হচ্ছে। কেননা ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকার (Bank of America) একটি লেটেস্ট রিসার্চ রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে Apple তাদের মোট আইফোন উৎপাদনের ১৮% -এরও বেশি ভারতে স্থানান্তর করতে পারে। মূলত, সরকার দ্বারা ঘোষিত ‘প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ’ (PLI) স্কিমের দৌলতে ভবিষ্যতে এদেশে আইফোন উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, কুপারটিনো-ভিত্তিক টেক জায়ান্টটি তাদের প্রোডাক্ট বিক্রি বাড়ানোর পাশাপাশি চীনের বিকল্প হিসাবেও ভারতকে দেখছে। আর তাই জন্যই হয়তো সংস্থাটি এদেশে নতুন নতুন ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট নির্মাণের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বিগত কয়েক বছর ধরে PLI স্কিমের জন্য ভারতের মোবাইল ফোন উৎপাদন সেক্টর যথেষ্ট লাভবান হয়েছে। কেননা এই স্কিমের অধীনে স্মার্টফোন নির্মাতাদের স্থানীয়ভাবে তাদের ডিভাইস তৈরি করতে উৎসাহ দেওয়া হয়। রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় ৬ কোটি মোবাইল উৎপাদন করা হয়েছে। যেখানে কিনা স্কিমটি ঘোষণার পর অর্থাৎ ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৩১ কোটি হয়ে গেছে। এই একই অর্থ বর্ষে (FY2021-22) ৪৫,০০০ কোটি টাকার মোবাইল রপ্তানিও হয়েছে ভারত থেকে। এছাড়া গত বছর ডিসেম্বর মাসে অ্যাপলের প্রধান সাপ্লায়ার সংস্থা ফক্সকন (Foxconn) PLI স্কিমের অধীনে ৩৫৭.৭১ কোটি টাকার ইনসেনটিভ পেয়েছে।

ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকার রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, PLI স্কিম আইফোন সহ অন্যান্য মোবাইল ফোনের স্থানীয় উৎপাদনকে ৩ গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে। যার ফলে ভারত ১,০৩৬.৮৫ কোটি টাকা পর্যন্ত মুনাফা অর্জন করতে পারবে। একই ভাবে, ২০২৬ সালের মধ্যে স্মার্টফোন বা আইফোন রপ্তানি ৫ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের ৪৫৩.২০ কোটি টাকার রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা আয় করার লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে।

এমনকি জানা যাচ্ছে PLI স্কিমের অধীনে এই মুহূর্তে ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ১৬% থেকে ২৫% -এ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়ে ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও ইন্ডিয়া রিসার্চের প্রধান আমিশ শাহ বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি ভারত মোবাইল ফোন/ইলেক্ট্রনিক্স প্রোডাক্টের জন্য একটি বিশ্বস্ত তথা আদর্শ বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন বিকল্প হতে পারে।”

তবে মোবাইল ফোনের উৎপাদন এবং রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও, কম্পোনেন্ট আমদানির ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ভারতকে। কেননা ২০১৭ সাল থেকে মোবাইল পার্টস আমদানির পরিমাণ এক তৃতীয়াংশে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ডিসপ্লে, মেমরি এবং সেমিকন্ডাক্টর কম্পোনেন্টগুলিকে স্থানীয়করণ করা কঠিনতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের জন্য। কেননা এই ধরণের প্রোডাক্ট উৎপাদনের জন্য হাই-এন্ড টেকনোলজির প্রয়োজন।

আবার মূল খবরে ফিরি, অ্যাপল ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে যেকোনো একটি আপকামিং সিরিজের আইফোন তৈরি করার লক্ষ্য নিয়েছে। আর এই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য, অ্যাপলের অন্যতম বৃহত্তম সাপ্লায়ার ফক্সকন ইতিমধ্যেই ভারতে তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট বাড়ানোর কাজে উঠেপড়ে লেগেছে৷ এক্ষেত্রে সংস্থাটি ২০২৪ সালের এপ্রিলের মধ্যে বেঙ্গালুরুতে একটি নতুন প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। আর এর জন্য ফক্সকন -এর সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট আধিকারিকরা কর্ণাটক সরকারের আধিকারিকদের সাথে দেখাও করেছেন৷ এছাড়া ভারতে অ্যাপলের নতুন অংশীদার ‘টাটা গ্ৰুপ’ (Tata Group), আসন্ন আইফোন ১৫ (iPhone 15) এবং আইফোন ১৫ প্লাস (iPhone 15 Plus) মডেল দুটিকে স্থানীয়ভাবে তৈরি করার দায়িত্বে থাকছে বলেও জানা গেছে। জানিয়ে রাখি, টাটা গ্রুপ সম্প্রতি উইস্ট্রনের ভারতীয় উৎপাদন লাইন অধিগ্রহণ করেছে।