CoinSwitch vs CoinDCX vs WazirX: ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচার জন্য কোন অ্যাপ সেরা

বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতেও ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মুদ্রার ওপর ভরসা রাখতে চাইছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে যে প্রশ্নটা সবার প্রথমে আসে, তা হল কীভাবে সহজে বিটকয়েন, ইথেরিয়াম এর মতো ভার্চুয়াল মুদ্রায় বিনিয়োগ করা সম্ভব? উত্তরটা হল মোবাইল অ্যাপ। ভারতে প্রচলিত ক্রিপ্টো অ্যাপগুলির খুঁটিনাটি সম্পর্কে এখনও ওয়াকিবহাল নন অনেকেই। নিম্নে এরকমই কয়েকটি জনপ্রিয় অ্যাপের সম্পর্কে রইলো বিস্তারিত আলোচনা।

CoinDCX

কয়েনডিসিএক্স বর্তমানে প্রচলিত ক্রিপ্টো অ্যাপগুলির মধ্যে অন্যতম। বহু ইউজার ডিজিটাল মুদ্রা কেনাবেচার জন্য এর উপর ভরসা রাখে। আসুন অ্যাপটির সুবিধা ও অসুবিধা জেনে নেওয়া যাক।

সুবিধা : কয়েনডিসিএক্স হল বহুল পরিচিত, বহুমুখী কর্মশক্তি সম্পন্ন একটি অনলাইন ট্রেডিং অ্যাপ, যার মাধ্যমে নিজের স্মার্টফোনে ঘরে বসে অতি সহজেই ক্রিপ্টো লেনদেন করা যায়। এটি ২০০+ ট্রেডকয়েনের লেনদেনের পক্ষে উপযুক্ত এবং ট্রেডিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কয়েনের বিকল্পগুলিও অনেক। লেনদেনের পুরো পদ্ধতিটিই নথিভুক্ত মোবাইল নম্বর ও ইমেল আইডির ওপর ভিত্তি করে দেওয়া একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা ব্যবহারকারীদের কাছে প্রক্রিয়াটিকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে। এছাড়া, মুদ্রা জমা ও তোলার ক্ষেত্রে কোনো বাড়তি টাকা দিতে হয় না, শুধু ০.১ % ‘Maker ‘ ও ‘Taker’ মূল্য লাগে যা ব্যবহারকারীদের জন্য যথেষ্ট সাশ্রয়ী। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হলে, এই অ্যাপে ব্যবহারকারীদের জন্য বিমা সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। আছে ব্যবহারকারীদের সত্যতা যাচাই এর ক্ষেত্রে উচ্চমানের নিরাপত্তাও। এছাড়া এই অ্যাপে একটি স্বতন্ত্র প্রোগ্রাম চালানো হয় যার মাধ্যমে গ্রাহকরা ক্রিপ্টো ট্রেডিং এর ব্যাপারে অনেক কিছু শিখতে পারে।

অসুবিধা : কয়েনডিসিএক্স অ্যাপটির নেতিবাচক দিক গুলির মধ্যে যেটি অন্যতম তা হল, এটি আইএসও সার্টিফায়েড হলেও ভারতে রেজিস্টার্ড নয়। অতএব, ভবিষ্যতে এর ওপর কেন্দ্রের কর চাপার সম্ভাবনা যথেষ্ট। এছাড়া অন্য ওয়ালেটে মুদ্রা স্থানান্তর এর ক্ষেত্রে এটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দাবি করে।

CoinSwitch Kuber

কয়েনসুইচ কুবের ভারতে প্রচলিত বিশ্বস্ত ক্রিপ্টো অ্যাপগুলির মধ্যে একটি। এটি Sequoia ,Ribbit Capital এর মতো বড় বড় ক্যাপিটাল ফার্মগুলি দ্বারা তহবিলপ্রাপ্ত।

সুবিধা : অ্যাপটির জটিলতাবিহীন, সহজ ইউজার ইন্টারফেস নতুন ব্যবহারকারী দের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। অ্যাপটিতে INR (NEFT, ব্যাংক ট্রান্সফার, UPI) দ্বারা সরাসরি ট্রেড করা সম্ভব। এই অ্যাপে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ‘Maker’ বা ‘Taker’ ফি ও লাগে না।

অসুবিধা : এই অ্যাপটির একটি অন্যতম নেতিবাচক দিক হলো এটির হিডেন চার্জ (Hidden charge), যা অন্যান্য ক্রিপ্টো লেনদেন সম্পর্কিত অ্যাপ গুলির সাথে তুলনা করলে স্পষ্ট হয়। পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয় ও ট্রেডিং সংক্রান্ত বিশদ বিবরণেও আরও উন্নতির দরকার। এছাড়াও অ্যাপটিতে INR ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে ট্রেড করা সম্ভব নয়। রিয়েল টাইম ও চার্জ এর আপডেটও যথেষ্ট ধীর। সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো অ্যাপটিতে মাঝেমধ্যেই হ্যাঙ্গিং এর সমস্যা দেখা যায়।

WazirX:

ভারতীয় ক্রিপ্টো অ্যাপগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ওয়াজির এক্স। বিশ্বের এক নম্বর ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ Binance এর মদতপুষ্ট এই অ্যাপের আওতায় রয়েছে ভারতের সবচেয়ে বেশী সংখ্যক নথিভুক্ত ব্যবহারকারী।

সুবিধা : এই অ্যাপে INR ছাড়াও US dollar, BTC P2P ইত্যাদি নানা মাধ্যমে বিনিয়োগ করা সম্ভব। WazirX এর WRX নামে একটি নিজস্ব কয়েন আছে, যার মাধ্যমে ট্রেডিং ফি জমা করলে ৫০ % ছাড় পাওয়া যায়। এটি একটি পেশাদারি অ্যাপের অনুরূপ, যেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য সঠিকভাবে দেখানো হয়।

অসুবিধা: ওয়াজির এক্স এ কারেন্সি কেনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। কেনা ও বিক্রির ক্ষেত্রে ফি ও কিছুটা বেশি। ‘Maker’ ও ‘Taker’ চার্জ ০.২ % যা অন্যান্য মাধ্যম গুলোর তুলনায় বেশি। এছাড়া এটির ইউজার ইন্টারফেসও বেশ জটিল, বিশেষত নতুন ব্যবহারকারীদের কাছে। তবে নির্ভরযোগ্যতার দিক থেকে ও হাই লিকুইডিটির (High liquidity) দিক থেকে অনেকাংশে এগিয়ে আছে WazirX।

বর্তমানে ভারতে ক্রিপ্টো কয়েনের বৈধতা প্রশ্নের মুখে থাকলেও, ক্রিপ্টো লেনদেন থেমে থাকছে না। ফলত ক্রিপ্টো লেনদেন সহায়ক বিভিন্ন অ্যাপগুলির ব্যবহারও বাড়ছে। উপরে উল্লিখিত তিনটি অ্যাপ ছাড়াও Unocoin, Zebpay মতো আরও অনেক অ্যাপ রয়েছে মার্কেটে, যা ক্রিপ্টোট্রেডিং কে সাধারণের কাছে সহজলভ্য করে তুলেছে।