দিনে বেতন ৯৫০০ টাকা, ফোন বা WhatsApp-এ চাকরির এই মেসেজে ভুলেও ক্লিক করবেন না

Avatar

Published on:

whatsapp-job-scam-fraudsters-using-new-technique-to-scam-people

WhatsApp job scam: নিরীহ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে জড়িয়ে বিনা কায়িক শ্রমে অর্থ উপার্জনের নেশায় স্ক্যামাররা নিত্যনতুন লোক ঠকানোর ফন্দি এঁটে বেড়াচ্ছে। যেমন সম্প্রতি, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ (Whatsapp) -কে কেন্দ্র করে ‘ইলেক্ট্রিসিটি বিল’ স্ক্যাম শুরু করেছিল একদল প্রতারক। এই স্ক্যামের ফাঁদে পা দিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেলেব্রেটিরা পর্যন্ত প্ররোচিত হয়েছিলেন। আর এখন দেশের সবথেকে সংবেদনশীল একটি বিষয় ‘বেকারত্ব’ -কে হাতিয়ার করে চাকরি সন্ধানী তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করছে এইসকল অসৎ ব্যাক্তিবৃন্দ।

বর্তমান সময়ে ভারতের একটি বড় অংশের তরুণ জনসংখ্যা সক্রিয়ভাবে চাকরির সন্ধান করছে। গত দু’বছর যাবৎ কোভিড অতিমারীর কারণে এদেশের অর্থনীতির স্তম্ভ কিছুটা টাল খেয়েছিল। ফলে আকস্মিক আসা এই বিপর্যয়ের দারুন ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল দেশের মানুষ। বিশেষত তরুণ তথা প্রাপ্তবয়স্করা এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে বিভিন্ন ‘জব সার্চিং’ (Job Searching) ওয়েবসাইট এবং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে চাকরির খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং এখনো অনেকেই করছেন। এই বিষয়ে হায়ারেক্ট নামক একটি চ্যাট-বেসড ডাইরেক্ট হায়ারিং প্ল্যাটফর্ম দাবি করেছে যে, দেশে ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী ৫৬% তরুণ চাকরিপ্রার্থী চাকরি খোঁজার সময় ‘জব স্ক্যামিং’ এর জালে জড়িয়ে পড়ছেন এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আর এইরূপ বেশিরভাগ প্রতারণার ঘটনাই ঘটছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে।

WhatsApp -কে কেন্দ্র করে চলছে ‘জব স্ক্যাম’

প্রতারকরা এখন প্রতারণা করার জন্য মানুষের দুর্বল জায়গাগুলিকে অনুধাবন করে সেগুলিকে কাজে লাগছে। যেমন সম্প্রতি একটি নতুন কৌশলের উপর বিশেষ ভাবে নির্ভর করছে প্রবঞ্চক-গোষ্ঠী। যেখানে ফোনে টেক্সট এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে, নামি কোম্পানিতে চাকরির সুযোগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। অফারটিকে আরও আকর্ষণীয় করতে, মেসেজে দৈনিক পারিশ্রমিক বা সেলারির বিবরণও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি নিউজ পোর্টাল দ্বারা শেয়ার করা স্ক্রিনশটে, “আপনি আমাদের ইন্টারভিউয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। দৈনিক পারিশ্রমিক ৯,৫০০ টাকা। বিস্তারিত আলোচনা করতে দয়া করে যোগাযোগ করুন এখানে : wa.me/919165146378 SSBO” লেখা একটি মেসেজ দেখা গেছে।

মেসেজগুলিতে দেওয়া ফোন নম্বর ভিন্ন হতেই পারে। তবে লেখার ধরণ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুরূপ। এছাড়া মেসেজে প্রদত্ত লিংকে ক্লিক করলে একটি ফিশিং ওয়েবসাইট আপনাকে রিডিরেক্ট করে দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে স্ক্যামাররা আপনার ব্যক্তিগত ডেটা চুরি করতে সক্ষম হবে। এর জন্য, ‘ফেক’ ওয়েবসাইটের অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি, আপনার কাছে নানাবিধ সংবেদনশীল তথ্য জানতে চাইবে বা UPI -এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করার দাবি করবে। আর এমনটা করলেই আপনার যাবতীয় তথ্য ও অর্থ চলে যাবে সরাসরি প্রতারকের হাতে।

প্রসঙ্গত, মেসেজে প্রদত্ত ফোন নম্বরের আগে ‘wa.me’ যোগ করে ওয়েব ব্রাউজার করলে আপনাকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে পুনঃনির্দেশ করা হবে। আর আগেই বলেছি, এইরূপ চ্যাট বক্স বা ওয়েবসাইটে ঢোকা মাত্রই স্ক্যামাররা আপনার কাছে বিভিন্ন প্রকারের ব্যক্তিগত তথ্য জিজ্ঞাসা করবে, যা যেকোনও মূল্যে এড়িয়ে যাওয়াই সবথেকে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

এই ধরনের স্ক্যামিং মেসেজ পেলে কি করা উচিত? (What should you do if you receive such scamming messages?)

দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট, অনলাইন জালিয়াতির থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। একই সাথে একটি ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম ইউনিটটি সাম্প্রতিক এই স্ক্যামিংয়ের পদ্ধতিও ব্যাখ্যা করেছে, “সাইবার অপরাধীরা চাকরি দেওয়ার নামে তরুণ তথা শিক্ষিত নাগরিকদের টার্গেট করছে৷ তারা naukari.com, shine.com ইত্যাদির মতো জব সার্চিং সাইটগুলির মাধ্যমে চাকরি খুঁজছেন এমন ব্যক্তিদের বায়ো-ডেটা বা সিভি সংগ্রহ করছে৷ তারপর, সিভি -তে দেওয়া ফোন নম্বর, ইমেল, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পূর্ববর্তী চাকরির বিবরণ ইত্যাদি বিশদ ব্যবহার করে, চাকরি সন্ধানীদের একটি ব্যক্তিগতকৃত জালিয়াতি ই-মেল প্রেরণ করছে, যেখানে নামী কোম্পানিতে মোটা টাকার চাকরির সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার দাবি করা হচ্ছে।”

এইরূপ অনলাইন স্ক্যামের ঘটনা সনাক্ত করার কয়েকটি পদ্ধতি বাতলেছে দিল্লি পুলিশ, যা নিম্নরূপ :

১. যেকোন স্বনামধন্য বা বৈধ সংস্থার নিয়োগকারীরা – রেজিস্ট্রেশন, নথি যাচাইকরণ (ডকুমেন্ট ভ্যারিফিকেশন), ইন্টারভিউয়ের সময়সূচী ইত্যাদির জন্য টাকা জমা দেওয়ার দাবি করবে না।

২. প্রতারকরা, অনুমোদিত জব কনসালটেন্সি ফার্মের ন্যায় অনুরূপ ই-মেল অ্যাকাউন্ট, লোগো ইত্যাদি ব্যবহার করে ছদ্মবেশ ধারণ করে। যাতে চাকরি সন্ধানীদের বিশ্বাস সহজেই অর্জন করা যায়। তাই এইরূপ ফার্মগুলির থেকে চাকরির সহায়তা নেওয়ার বা কোনো প্রকারের অর্থ প্রদান করার আগে অনুগ্রহ করে সংস্থাটির বৈধতা যাচাই করুন।

৩. কোনো জব কনসালটেন্সি ফার্ম থেকে চাকরির অফার এলে, আগেই অনলাইন ফোরামে গিয়ে উল্লিখিত ফার্ম সম্পর্কে অভিযোগ এবং পর্যালোচনা দেখুন। যদি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক ফার্মটির বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক কার্যকলাপের অভিযোগ জানিয়ে থাকে, তাহলে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন এবং প্রতারিত হওয়ার থেকে বাঁচুন।

৪. ‘ফেক’ ই-মেল আইডি, কাস্টমার কেয়ার নম্বর, ইত্যাদি দ্বারা প্রতারিত হবেন না। কোনো সংস্থার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার আগে অনলাইনে সংস্থাটি সম্পর্কে সার্চ করে বিস্তারিত জেনে নিন।

সঙ্গে থাকুন ➥