ভারতে আজ থেকে দাম বাড়তে পারে TV, AC-র, জেনে নিন কারণ

এই বছর ১লা এপ্রিল শুধুমাত্র ‘এপ্রিল ফুল’ দিবস হিসাবেই নয়, সাথে ২০২২ সালের নতুন ইউনিয়ন বাজেট কার্যকর হওয়ার দিন রূপেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা, গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদে বক্তৃতা রাখার সময়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছিলেন যে, “কাঁচামাল, বিশেষ করে অ্যালুমিনিয়াম আকরিকের (ধাতু) উপর আমদানি শুল্ক ৩০% করা হচ্ছে৷ এই ঘোষণা আজ থেকেই কার্যকর হতে চলেছে। আর, যেহেতু অ্যালুমিনিয়ামের মতো কাঁচামালগুলি টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার এবং রেফ্রিজারেটরের মতো পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, তাই এই পণ্যগুলির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। যার দরুন প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে গিয়ে আগামী দিনে বড়োসড়ো একটা মূল্যবৃদ্ধির সম্মুখীন হতে পারে সমগ্র ভারতবাসী।

আজ থেকে ৩০ শতাংশ হারে বাড়লো আমদানি শুল্ক, টিভি সহ এসি ও রেফ্রিজারেটরের দাম শীঘ্রই বাড়ার সম্ভাবনা

ইউনিয়ন বাজেট ২০২২-২০২৩ অনুসারে, আমদানির মাধ্যমে ভারতে অ্যালুমিনিয়াম আকরিক সরবরাহ করলে এখন ৩০% হারে কর দিতে হবে। আর, এই পদক্ষেপের দরুন আগামী দিনে অ্যাপ্লায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। ফলস্বরূপ, নতুন উৎপাদিত হোম অ্যাপ্লায়েন্সের মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। কেননা, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার বা রেফ্রিজারেটরের মতো প্রোডাক্টের কম্প্রেসার তৈরী করার ক্ষেত্রে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হল অ্যালুমিনিয়াম। ফলে উক্ত কর বা ট্যাক্স বৃদ্ধি ঘটলে, স্বাভাবিক ভাবেই এই ডিভাইসগুলির দামও বাড়বে বলে আশা করা যায়।

চলতি বছরের বাজেট পেশের পর মনে করা হচ্ছে, কাঁচামালের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির সরাসরি প্রভাব ইলেকট্রনিক্স বাজারে পড়বে। আবার দেশীয় কিছু ইলেকট্রনিক্স নির্মাতারা মনে করছেন যে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ এবং কোভিডের চতুর্থ ঢেউ আসার ফলে চীনে সম্প্রতি লকডাউন ঘোষণা, ভারতে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের দামে ৭% থেকে ১০% পর্যন্ত ফারাক ফেলতে পারে।

আসলে ভারত তথা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানুফ্যাকচারিং হাব স্থিত দেশগুলিতে মহামারীজনিত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পরে ইলেকট্রনিক্স সাপ্লাই চেইন অনেকটাই ট্র্যাকে ফিরে আসতে শুরু করেছিল। কিন্তু রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ, শিল্প জগকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করবে বলে বহু ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতকারক সংস্থা আশঙ্কা করছেন। কারণ, চিপ এবং অন্যান্য উপাদান তৈরিতে ব্যবহৃত মূল খনিজ এবং কাঁচামালের বৃহত্তম উৎপাদক কেন্দ্র হল রাশিয়া এবং ইউক্রেন। ফলে, দুটি দেশের সংঘর্ষে, প্রভাবিত হবে এখন বিশ্বের প্রতিটি দেশ। যাইহোক, বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি এখনও গত দুই বছরের চিপ ও কম্পোনেন্ট ঘাটতির অভাব পূরণ করে উঠতে পারেনি, তার মধ্যে ‘গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার’ ন্যায় রাশিয়া এবং ইউক্রেন ‘কনফ্লিক্ট’ আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরী করছে যন্ত্র-শিল্পের দুনিয়ায়।

আইএএনএস (IANS) -কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে, ইন্ডকাল টেকনোলজিস প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও, আনন্দ দুবে জানিয়েছেন, “রাশিয়া ও ইউক্রেন চিপ তৈরির জন্য ব্যবহৃত কিছু কাঁচামাল ও মূল খনিজগুলির বৃহত্তম উৎপাদক। গত ১২ মাস ধরে চিপ ঘাটতির সমস্যায় ইতিমধ্যেই বেহাল ইন্ডাস্ট্রি এবং সাম্প্রতিক ঘটনা এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।”

প্রসঙ্গত, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আরো ঘোষণা করেছে যে, ১লা এপ্রিল থেকে যেকোনো ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে লেনদেন প্রতি ৩০% ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। দেখতে গেলে, এই সিদ্ধান্তে ভারতের কোনো ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীই খুশি নন। তবে, সদ্য প্রবর্তিত এই নিয়মের জন্য বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে করের বোঝা চাপলেও, ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সির লিগালাইজেশনের পথকে আরো প্রশস্ত করবে বলেই বহু বিজ্ঞের মতামত।