ভারতীয় স্মার্টফোন মার্কেট থেকে হারিয়ে গেছে এই ১৫টি সাড়া জাগানো ব্র্যান্ড

Avatar

Published on:

ভারতীয় স্মার্টফোন বাজার বরাবরই প্রতিযোগিতায় ভরা। আর সেই জন্য ধারাবাহিকভাবে গ্ৰাহকদের সঠিক চাহিদা পূরণ না করতে পারলে এই খরস্রোতা বাজারে হাল ধরে রাখা কঠিন। একটা সময় ছিল, তখন ২০১৪-১৫ সাল, ভারতীয় মার্কেটে একাধিক ছোটো বড়ো স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের উত্থান ঘটেছিল। তার মধ্যে বেশ কিছু ব্র্যান্ড যথেষ্ট সাড়াও ফেলেছিল। কিন্তু, অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই অর্ধেক স্মার্টফোন কোম্পানি বিভিন্ন কারণে তাদের পাততাড়ি গুটিয়ে বাজার থেকে বিদায় নিয়েছে। মূলত চাইনিজ স্মার্টফোন কোম্পানিগুলির ভ্যালু ফর মানি স্মার্টফোনের কাছে হার মেনেছে তারা। আজ আমরা এইরকম ১৫ টি ব্র্যান্ড বা কোম্পানি সম্পর্কে আলোচনা করব যারা যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করে ভারতীয় স্মার্টফোন মার্কেটে পা রাখলেও, বর্তমানে তারা কার্যত ‘ফসিল’ হয়ে গেছে।

এলজি ইলেকট্রনিক্স (LG Electronics)

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে এলজি তাদের মোবাইল বিজনেস ইউনিটকে বন্ধ করার কথা ঘোষণা করে। একসময় প্রিমিয়াম কোয়ালিটির স্মার্টফোন নির্মাণের জন্য বিখ্যাত ব্র্যান্ডটি বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন মার্কেটে নিজেদের আরও প্রসারিত করার বদলে পুরোপুরি থেমে গেল। কোম্পানি তাদের গ্ৰাহকদের জানিয়েছে যে, আগামী বেশ কিছু সময় বিদ্যমান ফোনগুলির ক্ষেত্রে তারা সার্ভিস সাপোর্ট এবং সফ্টওয়্যার আপডেট প্রদান করবে।

সনি (Sony)

সনি বরাবরই পরিচিত ছিল প্রিমিয়াম স্মার্টফোন তৈরীর জন্য। কিন্তু, অনেক দিন ধরেই ধীরে ধীরে তাদের স্মার্টফোনের বিক্রি কমতে কমতে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, ২০১৯ সালের মে মাসে সনি ভারতে আর স্মার্টফোন বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতের পাশাপাশি ২০১৮ আর্থিক বর্ষে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, ওশেনিয়া ইত্যাদি জায়গাতেও সনি নিজেদের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।

এইচটিসি (HTC)

আমাদের অনেকেরই নিশ্চয় মনে আছে, তাইওয়ানিজ ব্র্যান্ড এইচটিসি, ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছিল ভারতের স্মার্টফোন বাজারে। কিন্তু চাইনিজ ব্র্যান্ডগুলির বাড়বাড়ন্তে যে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে তাদের পড়তে হয়েছিল সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভব হয় নি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে তারা আরও একবার চেষ্টা করেছিল ভারতীয় মার্কেটে প্রবেশের জন্য। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাও সফল হয়নি এবং অবশেষে তারা পুরোপুরিভাবে ভারতে তাদের স্মার্টফোন বিক্রি বন্ধ করে দেয়।

ব্ল্যাকবেরী (BlackBerry)

বিশ্বব্যাপী অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএসের (iOS) বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জনের আগে, ব্ল্যাকবেরী ছিল একমাত্র কোম্পানি, যাদের হ্যান্ডসেটে সেই সময় কিছু বিশেষ ফিচার পাওয়া যেত। যে কারণে তাদের কিওয়ার্টি কিপ্যাডের ফোনগুলি ভারত তথা বিশ্বের সর্বত্র অফিস যাত্রীদের হাতে হাতে দেখা যেত। কিন্তু তারপর অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্রযুক্তির কাছে ব্ল্যাকবেরীর প্রযুক্তি দাঁড়াতে পারেনি। শেষমেশ ২০২০ সালের আগস্ট মাসে তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং পার্টনার টিসিএলের (TCL) সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ায় তাঁরা তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়।

লেইকো (LeEco)

সংস্থাটি ভারতের স্মার্টফোন বাজারে বেশ ঘটা করে প্রবেশ করলেও, তাঁরা আর্থিকভাবে খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে ২০১৭ সালে তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়।

মেইজু (Meizu)

এটি একটি চাইনিজ স্মার্টফোন ব্র্যান্ড। তাঁরা শাওমির (Xiaomi) সাথে টক্কর দিতে কম দামে দুর্দান্ত হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন অফার করত। বেশ কিছু স্মার্টফোন খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছিল। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ভারতে তাঁরা ঠিকঠাক ভাবে ব্যবসাকে চালাতে অক্ষম হয় এবং বন্ধ করে দেয়।

স্পাইস (Spice)

স্পাইস মোবাইল খুব স্বল্প বাজেটের স্মার্টফোন তৈরীর জন্য বিখ্যাত হয়েছিল। কিন্তু তাঁদেরকেও পরে প্রবল প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয় এবং তাঁরা তাঁদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

কুইকু (Qiku)

২০১৪ সালে লঞ্চ হওয়া এই ব্র্যান্ডটিও কম দামে অনেক ভালো স্পেসিফিকেশন অফার করত। মাত্র দু’টি হ্যান্ডসেট তাঁরা লঞ্চ করেছিল, কিন্তু মার্কেটে সাড়া ফেলেতে পারেনি।

প্যানাসনিক (Panasonic)

ইলেকট্রনিক্স পণ্য নির্মাণকারী কোম্পানি প্যানাসনিক, বেশ কিছু সময় ধরে সস্তায় স্মার্টফোন লঞ্চ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোনোভাবেই সাড়া ফেলেতে না পেরে শেষমেশ হাল ছেড়ে দেয়।

ভিডিওকন (Videocon)

ভিডিওকন বেশ কম দামের মধ্য কিছু মোবাইল ফোন লঞ্চ করেছিল। কিন্তু, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অন্যান্য কোম্পানির কাছে তারা হার স্বীকার করে নেয় এবং ফোন বিক্রি করাই বন্ধ করে দেয়।

ওয়াইইউ (YU)

মাইক্রোম্যাক্সের সাব-ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত ওয়াইইউ কিছু দিন ভারতীয় মার্কেটে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এত চাইনিজ ব্র্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হেরে যায়।

আইবল (iBall)

জনপ্রিয় অ্যাক্সেসরিজ মেকার, আইবল বেশ কিছু বাজেট স্মার্টফোন বাজারে এনেছিল। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল গ্ৰামীণ অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছানো। কিন্তু ওপ্পো, শাওমি, ভিভো এবং অন্যান্য চাইনিজ ব্র্যান্ডগুলি যেভাবে ভারতীয় মার্কেটকে গ্ৰাস করে নিয়েছে,তার ফলে আইবলের পক্ষে আর টিকে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছিল।

ইনফোকাস (InFocus)

ইনফোকাস একটি আমেরিকান স্মার্টফোন ব্র্যান্ড, যারা মাত্র কয়েকটি হ্যান্ডসেট লঞ্চ করার পর হঠাৎ করেই ভারতে ফোন বিক্রি করা বন্ধ করে দেয়।

অ্যালকাটেল (Alcatel)

এই সংস্থাটি ভারতীয় স্মার্টফোন মার্কেটে প্রবেশ করলেও কখনই মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেনি। যথারীতি তাঁরাও ফোন বিক্রি বন্ধ করে দেয়।

আইভূমি (iVoomi)

এই সংস্থাটিও স্বল্প বাজেটের স্মার্টফোন তৈরীর জন্য পরিচিতি লাভ করলেও প্রবল প্রতিযোগিতার মুখে তারা হারিয়ে যায়।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন

সঙ্গে থাকুন ➥