WhatsApp Scam: সাহায্য চেয়ে পরিচিতের থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাচ্ছেন? এই কারণে এড়িয়ে চলুন

Avatar

Published on:

ইদানিংকালে সাইবার জালিয়াতি সম্পর্কে নতুন করে কাউকে আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। নিত্যনতুন ফন্দিফিকির বের করে হ্যাকারদের সাধারণ মানুষকে ঠকানোর ঘটনা রোজকার খবরের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, হ্যাকাররা এখন সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য WhatsApp-কে হাতিয়ার করেছে। আমরা সবাই জানি যে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হল WhatsApp। আর এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে টার্গেট করে নিজেদের কার্যসিদ্ধি করতে নতুন পন্থা অবলম্বন করেছে হ্যাকাররা।

এবার আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন আসছে যে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কীভাবে লোক ঠকাচ্ছে হ্যাকাররা? তাহলে বলি, নতুন এই স্ক্যামটির নাম দেওয়া রয়েছে “friend in need,” যেখানে হ্যাকার কোনো বন্ধু বা নিকট আত্মীয়-পরিজন হওয়ার ভান করে টাকা চেয়ে ইউজারদের কাছে মেসেজ পাঠাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের (UK) অনেক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে মেসেজ পেয়েছেন যে তাদের সাহায্যের প্রয়োজন। আর খুব নিকট কেউ সাহায্য চাইলে কি আর মুখ ফিরিয়ে থাকা যায়? তাই এই ভুয়ো মেসেজের ফাঁদে পা দিয়ে অর্থসাহায্য করে টাকা খুইয়েছেন বহু সংখ্যক ইউজার।

উদাহরণস্বরূপ, টোনি পার্কার (Toni Parker) নামের ৫৩ বছর বয়সী একজন নার্স সম্প্রতি এই কেলেঙ্কারির শিকার হন। তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি তাঁর ছেলের তরফ থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ পান, যেখানে তাঁর ছেলে তাঁকে জানায় যে তার কিছু টাকার প্রয়োজন। ছেলের টাকার প্রয়োজন থাকলে মা কি আর না দিয়ে থাকতে পারে! তাই দ্বিতীয়বার চিন্তাভাবনা না করে তিনি তৎক্ষণাৎ ২,৫০০ পাউন্ড তাঁর ছেলেকে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তার কিছুদিন বাদেই জানতে পারেন যে ওই মেসেজটি আদৌ তার ছেলে তাঁকে করেনি, ফলে তাঁর ওই টাকা যে জালিয়াতদের অ্যাকাউন্টেই চলে গেছে তা জলের মতো স্পষ্ট। পার্কারের মতে, প্রতারকরা হয়তো বেশিরভাগ মায়েদেরই টার্গেট করবে, কেননা ছেলে-মেয়ে সাহায্য চাইলে মা কখনোই সাহায্য না করে থাকতে পারবে না। ফলে টাকা হাতানোর জন্য মায়েদের টার্গেট করা এক অত্যন্ত দুর্দান্ত উপায়।

এছাড়া, কোনো বন্ধু কোথাও আটকে পড়েছে, বা অসুস্থতার জন্য টাকার প্রয়োজন – এমন দাবি করেও বহু ইউজারের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়ো মেসেজ এসেছে। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ট্রেডিং স্ট্যান্ডার্ড (UK’s National Trading Standards) অনুযায়ী, সেদেশে বসবাসকারী ৫৯ শতাংশ মানুষ এই ধরনের স্ক্যাম মেসেজ পেয়েছেন। National Trading Standards স্ক্যাম টিমের প্রধান লুইস ব্যাক্সটার (Louise Baxter) জানিয়েছেন, স্ক্যামাররা এমনভাবে ইউজারদের পরিচিত হওয়ার ভান করে মেসেজগুলি পাঠাচ্ছে যাতে তাদের মনে কোনোরকম সন্দেহের উদ্রেক না হয়, এবং টাকা আদায়ের জন্য তারা এমন কিছু কারণ দর্শাচ্ছে যা শুনে ইউজারদের টাকা না দিয়ে থাকা সত্যিই মুশকিল। তাই তিনি এবং হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ, ইউজারদের এই ধরনের কোনো মেসেজ পেলে তৎক্ষণাৎ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সেটি যাচাই করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে আপনি বলতেই পারেন যে, যদি বন্ধু মেসেজ নাই করে থাকে তাহলে হ্যাকার কীভাবে বন্ধুর হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে মেসেজ পাঠাচ্ছে? সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যাকারদের প্রথম টার্গেট হল ইউজারের বন্ধুর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা, এবং এই হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে তারা একটি আনঅথোরাইজড অ্যাকাউন্ট তৈরি করে। সেখান থেকে যদি ইউজারদের কাছে মেসেজ যায়, তাহলে ইউজারের মনে হবে যে তার বন্ধুই তাকে মেসেজ পাঠাচ্ছে, তিনি ঘূণাক্ষরেও জানতে পারবেন না যে সেটি সম্পূর্ণ একটি ভুয়ো মেসেজ এবং এর ফলে তিনি বড়োসড়ো রকমের সাইবার জালিয়াতির শিকার হতে চলেছেন। বিশেষ করে যদি কারোর ফোন হারিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে সেই হারানো ফোন থেকে প্রাপ্ত কন্ট্যাক্টসে এই ধরনের ভুয়ো মেসেজ পাঠানো তো হ্যাকারদের কাছে জলবৎ তরলং!

তাই এই জাতীয় কেলেঙ্কারির হাত থেকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকতে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করাই হল এক এবং একমাত্র উপায়। যদি কখনো আপনার কাছে এই ধরনের কোনো মেসেজ আসে, তাহলে তৎক্ষণাৎ উত্তেজিত বা চিন্তিত না হয়ে যে আপনাকে মেসেজটি করেছে তাকে ফোন করে জেনে নিন যে যথার্থই মেসেজটি তার কাছ থেকেই এসেছে কি না। সর্বদা মনে রাখবেন, আপনি যদি নিজে যথাযথভাবে সতর্ক থাকেন, তাহলে হ্যাকাররা কখনোই আপনার ক্ষতি করতে পারবে না।

সঙ্গে থাকুন ➥